প্রায় দেড় যুগ আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন মো. মমিনুল ইসলাম (৩৮)। অন্যদিকে সাত বছর আগে যোগ দেন সৈনিক শান্ত মন্ডল (২৬)। কুড়িগ্রামের এই দুজন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য গত মাসে সুদানে যান। যাওয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দ্রুত ফিরে আসার কথা দিয়েছিলেন শান্ত। মমিনুল মাকে চিন্তা না করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু গতকাল সন্ত্রাসীদের হামলায় দুজনই শহীদ হয়েছেন। প্রিয়জনের মৃত্যুর খবরে দুজনের বাড়িতেই এখন মাতম চলছে।

সৈনিক শান্ত মন্ডল কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা। তিনি সাবেক সেনাসদস্য নুর ইসলাম মন্ডল ও সাহেরা বেগমের ছোট ছেলে। তাঁর বড় ভাই সোহাগ মন্ডলও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অন্যদিকে সৈনিক মমিনুল ইসলামের বাড়ি উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। মমিনুলের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে ও ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ড্রোন হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। ওই হামলায় দায়িত্বরত কুড়িগ্রামের শান্ত ও মমিনুলসহ নাটোর, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধার মোট ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। আহত হন আরও আটজন।

রোববার বিকেলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মন্ডলপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শান্ত মন্ডলের মৃত্যুর খবরে স্বজনেরা আহাজারি করছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শান্তর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী দিলরুবা খন্দকার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শান্ত আমাকে কথা দিয়েছিল দ্রুত ফিরে আসবে। সে কথা ভাঙতে পারে না। আমার শান্তকে এনে দাও।’ বলতে বলতে মূর্ছা যান তিনি।

রাজারহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিপ্লব আলী পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে শান্তদের বাড়িতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সুদানে হামলায় শান্ত নিহত হয়েছে। এই সংবাদ রংপুর সেনাক্যাম্প থেকে আমাকে আজ দুপুরে জানায়। এরপর আমি এই বাসায় এসেছি।’

আরও পড়ুনসুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত, লড়াই চলছে১৩ ডিসেম্বর ২০২৫শান্ত মন্ডলের স্ত্রী দিলরুবা খন্দকার বাবার বাড়িতে ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে স্বামীর বাড়িতে আসেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম ত য র খবর শ ন ত রক ষ মম ন ল

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের তামাশা

মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় পর্যন্ত পাকিস্তানিরা আশা করেছিল, চীন হয়তো তাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের চীন সফরে মধ্যস্থতা করে তাদের সেই আশা আরও প্রবল হয়েছিল। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য ও শেষ পর্যন্ত প্রবল আশা ছিল, যা তারা প্রকাশ্যে দেখাচ্ছিল, তা হলো চীন শেষ পর্যন্ত তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু এটি ছিল একটি তামাশা। কারণ, চীনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা সামরিকভাবে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না। সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা দেবে।

রোববার দ্য ডেইলি স্টার মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক ইতিহাস’ শীর্ষক আলোচনায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান এই মন্তব্য করেন।

ডেইলি স্টার ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় ও ব্যক্তির অবদান তুলে ধরতে ‘ইতিহাস আড্ডা’ শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার আয়োজন করেছে। এটি ছিল সপ্তম আয়োজন। কবি ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক ছিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ। অসুস্থতার কারণে আরেক আলোচক গবেষক–সাংবাদিক মঈদুল হাসান আসতে পারেননি।

চীনের তামাশা, যুক্তরাষ্ট্রের নাটক

অধ্যাপক রেহমান সোবহান মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, চীন পাকিস্তানের সঙ্গে যে তামাশা করছিল, সেই নাটক সাজিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চীনকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যেন তারা যুদ্ধে যোগ দেয়। চীন যখন যুদ্ধে আসছিল না, তখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর হুমকি দেয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের নৌবহরকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি লক্ষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সপ্তম নৌবহর আর আসেনি। এর পরিণতিতেই নিয়াজির চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান।

‘মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক ইতিহাস’ শীর্ষক ইতিহাস আড্ডায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান। রোববার দ্য ডেইলি স্টার মিলনায়তনে

সম্পর্কিত নিবন্ধ