রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়
Published: 14th, December 2025 GMT
বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, বিচারকদের সৃষ্ট যাবতীয় অন্যায়ের জন্য এখন থেকে অন্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ বন্ধ করতে হবে। অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে আজ রোববার বিকেলে সমাপনী অভিভাষণ দেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে এই অভিভাষণ অনুষ্ঠিত হয়।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, জনগণের জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইন বৃহত্তর রাজনীতির একটা অঙ্গ হলেও, বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কেবল ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণির পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের আলাদা কোনো অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই। সে কাজের জন্য নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই যথেষ্ট। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি যে আদর্শকে ধারণ করেই গড়ে উঠুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
পৃথক সচিবালয়কে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও ফলপ্রসূ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করাই এখনকার প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কোনো সার্থকতা নেই, যদি না আমরা ব্যক্তিগত অসততার ব্যপারে সতর্ক থাকি। একটি স্বাধীন সচিবালয় কেবল শুরু, সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়। আপনাদের উচিত সততা আর যোগ্যতার ব্যপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। অনুপার্জিত অর্থের বাসনা, অন্যায্য বিলাসী জীবন এবং অসংগত ক্ষমতার প্রতিপত্তি যদি আমাদের মনকে কলুষিত করে রাখে, তাহলে পৃথিবীর কোনো আইনি বিধানই আমাদের সামষ্টিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১১ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবিধান অনুযায়ী, বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর। সে হিসাবে বর্তমান প্রধান বিচারপতি শেষ কর্মদিবস ২৭ ডিসেম্বর।
দুঃশাসনের বলয়কে আবরণ দেওয়া
দেশের অগ্রযাত্রায় বহু বরেণ্য বিচারপতি তাঁদের প্রজ্ঞা, ন্যায়বোধ ও সাহসিকতার মাধ্যমে জাতির ব্যাপক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছিলেন বলে অভিভাষণে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, এই সত্যও অস্বীকার করা যায় না যে বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্বে, বিচার বিভাগ অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট-কৌশলের অঘোষিত সহযোগী হিসেবেও পরিগণিত হয়েছে। দুঃশাসনের বলয়কে আবরণ দিয়েছেন অনেক বিচারক। অন্যায় ও অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিচারকদের এই নৈতিক বিচ্যুতিও জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই–আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, এ দেশের জনগণ কোনো দিন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা যদি এখনো পূর্বযুগের ক্ষমতাকেন্দ্রিক, প্রভু–ভৃত্য চেতনায় আবদ্ধ থাকি এবং বিচারিক সেবাকে নাগরিক অধিকার না ভেবে প্রশাসনিক দয়া হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বিচার ব্যবস্থার বেসরকারীকরণ বা সালিস নিষ্পত্তিপ্রক্রিয়ার পূর্ণ আধিপত্যকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অধিকাংশ বিরোধ বিকল্প পদ্ধতিতে সমাধান করছে। সুতরাং আমরা যদি ভেবে থাকি যে বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতি অবহেলা করেও বিচার বিভাগ তার প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে পারবে, তাহলে আমরা প্রকৃত অর্থেই এখনো বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করছি। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যদি এই ব্যবস্থার অভ্যন্তরে বিদ্যমান অসৎ পন্থা, অযথা হয়রানি এবং প্রতিকারের পরিবর্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মানসিকতা নির্মূল করা না যায়, তবে বিচার বিভাগ একদিন প্রান্তিক, অপ্রাসঙ্গিক ও অবিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’
বিচারকদের বোধ, ভারসাম্য, নৈতিকতা বজায় রাখতে সুসাস্থ্যকর পরিবেশ থাকা জরুরি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচারক যদি নিজেকে আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি এবং সুস্থ জীবনচর্চায় প্রতিষ্ঠিত করতে না পারেন, তবে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে যেন আপনারা জীবনের পরম দায় হিসেবে গ্রহণ করেন।’
সমাপনী অভিভাষণে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ রকদ র ব চ রক র জন য র জন ত উদ দ শ ত করত ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন না হওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে: আমীর খসরু
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সব ষড়যন্ত্র জনগণ প্রতিহত করবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত সংসদ হবে। এটি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগ এলাকায় নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১০ আসনের শুলকবহর ও ৪২ নম্বর সাংগঠনিক ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। তারেক রহমানের রাজনীতি এ দেশের মাটি ও মানুষের জন্য। জনগণের প্রত্যাশা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন তিনি।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশের, গণতন্ত্রের বাঁচা–মরার সংগ্রাম। জনগণ ভোট দিলে সরকার গঠন করে প্রথম দিন থেকে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করবে বিএনপি। হাতে সময় নেই, মানুষের ধৈর্য নেই। পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হবে। এক কোটি লোকের চাকরি দিতে হবে ১৮ মাসে। এই ওয়াদা পূরণ করতে হলে বিনা মূল্য প্রাথমিক পাঁচটি সেবা দিতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়ন করতে হবে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে। কৃষকের ক্ষমতায়ন করবে কৃষক কার্ড।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের পথ থেকে বিএনপি কখনো বিচ্যুত হয়নি। আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল, শহীদ জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ, বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ তারেক রহমানের আদর্শের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল, সদস্য মামুনুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আশরাফ চৌধুরী, গোলাম কাদের চৌধুরী, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জমির উদ্দিন, শুলকবহর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শামসুল আলম, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শায়েস্তা উল্লা চৌধুরী প্রমুখ।