এক যুগ পর ডেসটিনির রফিকুল আমীন কারামুক্ত
Published: 16th, January 2025 GMT
বহু স্তর বিপণন তথা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ডেসটিনির ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ১৯ জনের ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলম গতকাল বুধবার এ রায় দেন।
এদিকে রায়ের পর সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারাগারে থেকে মুক্তি পেয়েছেন ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন। গতকাল সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। রফিকুলের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় তাঁকে সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ছাড়া হয়। তাঁর আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী সাংবাদিকদের জানান, রায়ের পর ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় রফিকুল আমীন মুক্তিলাভ করেন। তবে তাঁর স্ত্রী ফারাহ দিবার সাজার ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তিনি কারাগারে আছেন।
এর আগে ২০২২ সালের ১৫ মে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় রফিকুল আমীন, এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
আদালতে ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে রফিকুল আমীন, মোহাম্মদ হোসেন ও হারুন-অর-রশীদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা পলাতক। রায়ের পর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
কারাদণ্ড পাওয়া অন্য ১৭ জন হলেন– ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জসীম উদ্দিন, জাকির হোসেন, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের সোহেল, মোসাদ্দেক আলী, আবদুল মান্নান ও আবুল কালাম আজাদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ-পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা হয়। রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ মামলা করে দুদক। দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে উভয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ট্রি প্লান্টেশনের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ১৯ জনের বিরুদ্ধে। দুই মামলায় মোট আসামি ৫৩ জন। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম দুই মামলাতেই আছে। আসামিদের মধ্যে আগে থেকেই কারাগারে আছেন মোহাম্মদ হোসেন ও রফিকুল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র য় র পর
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।