দুই বছরে প্রায় হাজার একর কৃষি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর কারণ কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার লোকজন। বিনা পরিশ্রমে টাকা আসায় লোভে পড়ে উর্বর মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন জমির মালিকরা। এমন অবস্থা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার।
মুরাদনগর উপজেলায় ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। প্রতি বছর গড়ে একেকটি ইটভাটায় ৮০ লাখ ইট তৈরিতে ব্যবহার হয় প্রায় ১০ একর কৃষি জমির মাটি। সে হিসাবে গত দুই বছরে ৫০টি ইটভাটায় ৮০ কোটি ইট তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে প্রায় এক হাজার একর কৃষি জমির মাটি।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, দুই বছর আগে মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে নদীনালা, খালবিল বাদে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি ছিল। শ্রেণি ভেদে প্রায় সব জমিতেই সারাবছর কোনো না কোনো ফসল চাষ হতো। গত দুই বছরে কৃষি জমি থেকে ইটভাটার মাটি সংগ্রহ, খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও বাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় এক হাজার হেক্টর কৃষি জমি চাষের অযোগ্য হয়ে ডোবায় পরিণত হয়েছে। কৃষি অফিসের চলতি বছরের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাইরা গ্রামের কৃষক সহিদ মিয়া বলেন, ‘সরকারি লোকরা চাইলে শুধু জমি থাইকা মাটি কাটা না, সব অবৈধ কাজই বন্ধ করা সম্ভব। প্রথম প্রথম সব সরকারি কর্মকর্তাই কিছু দিন ভালো অভিযান চালায়। পরে আবার কয়েকদিন যাইতে না যাইতে দেহি (দেখি) সব আগের মতোই। এক সময় মনে হয়, সবই টাকার খেলা।’
দারোরা গ্রামের কৃষক দিলু মিয়ার অভিযোগ, জমির মাটি বিক্রি করতে না চাইলে নানাভাবে বাধ্য করা হয়। অন্যথায় অনুমতি ছাড়াই মাটি কাটা শুরু করে। অধিকাংশ মাটি ব্যবসায়ীই ক্ষমতাধর লোক। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথাও বলা যায় না। মাটি কাটায় বাধা দিতে গেলে অনেক সময় মারধরের শিকার হতে হয়। মাটি কাটার কারণে প্রায় সব কৃষি জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মাটি কাটা চক্রের কয়েক সদস্যের সঙ্গে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা জানান, কৃষককে ন্যায্য মূল্য দিয়েই জমির মাটি কিনে থাকেন তারা। কাউকে জোর-জবরদস্তি ছাড়াই সব সেক্টর ম্যানেজ করে মাটি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। অনেক কর্মকর্তা প্রথম প্রথম একটু ঝামেলা করেন। পরে আবার সব ঠিক হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, ‘কৃষি জমি রক্ষায় কোনো বিশেষ আইন নেই। ফলে আমরা চাইলেও সরাসরি গিয়ে বাধা দিতে পারি না। আমরা সব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা করি।’ তাঁর ভাষ্য, উপজেলার অধিকাংশ কৃষকই জমি বর্গা বা পত্তন নিয়ে চাষ করেন। ফলে প্রকৃত মালিক কৃষক না হওয়ায় জমির মর্যাদা বোঝেন না। নগদ টাকার লোভে জমির উর্বর মাটি বিক্রি করে দেন তারা। তাদের ধারণা, জমির মাটি বিক্রি করলে দুইভাবে লাভবান হতে পারেন তারা। প্রথমত, জমি বিক্রির সমমান টাকা চলে আসে মাটি বিক্রি করে। দ্বিতীয়ত, জায়গাটাও নিজের রয়ে গেল। জমির মালিকদের এই ধারণার ফলে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে মাটি বিক্রি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাটি কাটার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছর পর এ উপজেলায় চাষযোগ্য কৃষি জমির সংকট তৈরি তবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান জানান, কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা একটি বড় অপরাধ। কারণ জমি থেকে মাটি কাটার ফলে সেই জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যায়। আর প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। কৃষিজমি রক্ষায় ইতোমধ্যেই অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। তার দাবি, যেখান থেকেই অভিযোগ আসছে, সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা জরুরি। জনগণ সচেতন না হলে শুধু অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে না থেকে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কৃষিজমি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ ই বছর প রথম ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

সিমন্সের চোখে মিরাজের অসুস্থতা ‘মধুর সমস্যা’

গলের মেঘলা আকাশ আর টানা বৃষ্টির মাঝে বাংলাদেশ টেস্ট দলের প্রস্তুতি শুরু হলো রোববার। শুরুর দিনেই একটি দুশ্চিন্তা—অসুস্থতার কারণে অনুশীলনে ছিলেন না ওয়ানডে অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের চোখে এটি আবার ‘মধুর সমস্যা’।

বাংলাদেশ কোচের মতে, মিরাজের সমস্যা সুযোগ করে দেবে অন্য কারও। তবে মিরাজও যে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন, সেটিও জানিয়েছেন সিমন্স। অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন মিরাজের সর্বশেষ অবস্থা, ‘গত দুই দিনে সে অনেকটাই ভালো আছে। আমরা দেখব সন্ধ্যায় ওষুধের পর সে কেমন থাকে। আশা করি, কাল অনুশীলন করতে পারবে এবং খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’

সিমন্স যোগ করেছেন, ‘এটা (মিরাজের অসুস্থতা) নিশ্চয়ই চিন্তার। তবে একজনের সমস্যা অন্যজনের জন্য সুযোগ এনে দেয়। দলের সবাই চায় মিরাজ সুস্থ হয়ে উঠুক, কিন্তু তারা এ–ও জানে, যদি মিরাজ না-ও খেলতে পারে, তাহলে অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটা সমস্যা, তবে সমস্যাটা মধুর।’

মুশফিকের কাছে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই—সব খেলোয়াড়ের কাছেই আমার চাওয়া একই থাকবেমেহেদী হাসান মিরাজ

এদিন অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে নিয়েও কথা বলেন সিমন্স। ২০১৩ সালে গলে ডাবল সেঞ্চুরি করা মুশফিকের কাছে বড় কিছু প্রত্যাশা করছেন না কোচ। তাহলে কী চাওয়া সিমন্সের? বাংলাদেশ কোচ বললেন, ‘আমি চাই সে যেন খেলাটা উপভোগ করে। ওই ইনিংস যেমন সে আনন্দ নিয়ে খেলেছিল, এবারও যেন সেটাই করে, তা-ই চাই। মুশফিকের কাছে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই—সব খেলোয়াড়ের কাছেই আমার চাওয়া একই থাকবে।’

সম্প্রতি ওয়ানডে অধিনায়কত্বে হঠাৎ পরিবর্তন এনে নাজমুল হোসেনের বদলে মিরাজকে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। সিমন্স মনে করেন, টেস্টে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নাজমুলের ওপর পড়বে না, ‘আমি একেবারেই মনে করি না যে এটি ওকে প্রভাবিত করবে। মাঠে নামলে নাজমুল শুধু ক্রিকেট নিয়েই ভাবে, বাইরের বিষয় আমরা দেখি। তাই এটা ওর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে না।’

বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ