আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনের সরকারি জোট ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) গাজা উপত্যকার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে। শুক্রবার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং পিএ জোটের বৃহত্তম শরিক ফাতাহের শীর্ষ নেতা মাহমুদ আব্বাসের দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রেসিডেন্ট আব্বাসের নির্দেশনা অনুযায়ী গাজা উপত্যকার পূর্ণ দায়দায়িত্ব নিতে যাবতীয় প্রস্তুতির শেষ করেছে ফিলিস্তিনের সরকার। এই দায়িত্ব পালনের জন্য যেসব প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা টিম প্রয়োজন, সেসব গঠনের কাজও শেষ হয়েছে।” সূত্র : সিএনএন

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে আনা, পানি ও বিদ্যুৎসহ জরুরি সব পরিষেবা ফের চালু করা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং উপত্যকার ভবন, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজে নেতৃত্ব দেবে পিএ।

গাজা উপত্যকায় এক সময় ফাতাহ ক্ষমতাসীন ছিল। ২০০৬ সালের নির্বাচনে সেখানে হামাস জয়ী হয়। তারপর ২০০৭ সাল শেষ হওয়ার আগেই ফাতাহকে উপত্যকা থেকে বিদায় করে হামাস। বস্তুত ২০০৬ সালের পর আর কোনো নির্বাচন হয়নি গাজায়।

ফলে, গত প্রায় ১৯ বছর ধরে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে যে অতর্কিত হামলা ঘটেছিল, তার মূল পরিকল্পনাকারী এবং নেতৃত্বের ভূমিকায়ও ছিল হামাস। নজিরবিহীন সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস ও প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা।

শনিবার যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল, তার অন্যতম একটি শর্ত বা ধারা হলো— হামাস আর গাজার নেতৃত্বে থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে হামাস প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব এই শর্তে সায় দিয়েছে।

২০২৪ সালে এএফপিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম। সেখানে তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পর আর গাজা শাসনের দায়িত্বে থাকতে চাইছে না হামাস।

এছাড়া সম্প্রতি কায়রোতে হামাস এবং ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন ফাতাহের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা এই মর্মে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) মনোনীত যে কোনো দল বা গোষ্ঠী গাজাকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান

একটা রাষ্ট্রের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছু মানদণ্ড আছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসম্পন্ন যুগোপযোগী শিক্ষার প্রসার করা। শিক্ষকদের দুর্বল বেতনকাঠামো দিয়ে এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শুধু তা–ই নয়, অনেক সময় নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শিক্ষকদের বেতনও আটকে যায়। যেমন আমরা দেখছি সারা দেশে মোট ১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক–কর্মচারীরা ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে গুরুত্বারোপ করা হলেও সেখানে নানা অবহেলা বিদ্যমান। এটি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০০৬ সাল থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীন দেশের ১০টি জেলায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প শুরু হয়। ২০০৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। এরপর তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিতকরণ হওয়ার পর ২০১৪ সালের জুনে শেষ হয়। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেতেন। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অনিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ মাস ধরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। ফলে বাড়িভাড়া, সন্তানের শিক্ষা ও চিকিৎসা—সবই ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকেরা যে আর্থিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা তাঁদের পেশাদার জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন উভয়কেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

যে শিক্ষকেরা দেশের টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের এমন করুণ দশা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এই শিক্ষকেরা মনোবল হারিয়ে ফেলছেন, ক্লাসে স্বাভাবিক মনোযোগ দিতে পারছেন না এবং এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। এমন অবস্থায় কীভাবে দেশের টেক্সটাইল খাতকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা সম্ভব, তা একটি বড় প্রশ্ন।

শিক্ষকদের এই দুর্দশা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত এই ইনস্টিটিউটগুলো বহু বছর ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে। আদালতের রায়ের পরও এ অচলাবস্থা কাটছে না। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট এবং চলতি বছরের ২১ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিলেও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তা কার্যকর করছে না। এই দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচার বিভাগের আদেশকে উপেক্ষা করার প্রবণতা রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে।

আমরা আশা করব টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের এ দুর্দশা দ্রুত কেটে যাবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের দিকে সুদৃষ্টি দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান