বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে একটি চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে বিএম কলেজের ছাত্র রহমাতউল্লাহ সরদার সাব্বিরের। এখনো চোখের ভেতরে বিঁধে রয়েছে গুলির একটি স্প্রিন্টার। মাঝে-মধ্যে চোখে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে হচ্ছে সাব্বিরকে। এরপরও আক্ষেপ কিংবা অনুশোচনা নেই তার। এক চোখের বিনিময়ে হলেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন দেখতে পেয়েছেন, এটাই তার বড় শান্ত্বনা, বড় সফলতা।

তবে সাব্বির তার পরিবারের অচলাবস্থা দেখে কষ্ট পান। বৃদ্ধ মা ও দুই ভাই নিয়ে চার সদস্যের সংসার তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন সাব্বিরই। পড়াশোনা সবেমাত্র শেষ করে ভালো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন এমন প্রত্যাশা ছিল তার।

বড় ভাই অসুস্থ হওয়ায় তিনি উপার্জন করতে পারেন না। ছোট ভাই এখনো পড়াশুনা করছে। সব মিলিয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাব্বিরই এখন পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভাব-অনটনের সংসারে চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষাধিক টাকা ঋণ করতে হয়েছে। এ ঋণে তার পরিবার এখন ডুবতে বসেছে। 

সাব্বির জানান, সবেমাত্র তিনি বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছেন। মা অনেক কষ্ট করে এবং অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তিনি ভালো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন- এমন আশা ছিল বৃদ্ধা মা ও দুই ভাইয়ের। কিন্তু পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়ে সেই আশা এখন ফিকে হয়ে গেছে।

সাব্বির বলেন, ‘‘২৪’র জুলাইয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে আমি ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেই। ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন সরকারি বিএম কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছি। সরকার পতনের আগের দিন গত ৪ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে বিএম কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকালে চৌমাথা সিএন্ডবি রোড় এলাকায় পুলিশের এলোপাথারী গুলির মুখে পড়ি। এ সময় ছাত্রদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া তিনটি গুলি আমার চোখে বিদ্ধ হয়। এতে আমি রাস্তায় পড়ে কাতরাতে থাকলে সহযোদ্ধারা আমাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই দিন রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুই মাস চিকিৎসা শেষে আমাকে রিলিজ দেওয়া হয়।’’

সাব্বির জানান, তার চোখ থেকে দুটি স্প্রিন্টার বের করা সম্ভব হলেও একটি চোখের মধ্যে রয়ে গেছে, যা কখনো বের করা সম্ভব হবে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি চোখ দিয়েও পুরোপুরি দেখতে পারছেন না।

তিনি জানান, দুই মাসে হাসপাতালে থাকা ও চিকিৎসা বাবদ তার পরিবারের ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধারদেনা করে চিকিৎসা করতে হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাইন্ডেশন থেকে মাত্র এক লাখ টাকার অনুদান পেয়েছেন।

সাব্বির জানান, শুধু তিনি একা নন, বরিশাল নগরী ও জেলায় ১০২ জন আহত যোদ্ধা রয়েছেন। ২৪’র জুলাই আন্দোলনে বরিশাল বিভাগে ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছে। ঢাকায় আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হয়েছে বরিশালের ৩০ জন শিক্ষার্থী। এসব শহীদ ও আহত পরিবারের অবস্থা করুণ। যারা একজন স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তারা আজ সবার কাছে অবহেলিত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার। এটা কাম্য হতে পারে না। 

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিএম কলেজের সমন্বয়ক ফুজাইফা রহমান বলেন, ২৪ এর অভ্যুত্থানের সাব্বির ছিলেন সামনের সারির একজন যোদ্ধা। এ কারণে পুলিশের টার্গেটে ছিলেন সাব্বির। পুলিশের ছোড়া এলোপাথারী গুলিতে চোখ হারাতে হয়েছে তাকে।
 

ঢাকা/পলাশ/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র র পতন

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।

ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।

ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।

গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে।  এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার  বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ