বাঁধের কাজে আগ্রহী নয় ৫ প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা
Published: 20th, January 2025 GMT
তাহিরপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) দায়িত্বশীলরা। জানা গেছে, বাঁধের কাজের নকশা ও প্রাক্কলন খরচের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল না থাকায় বাঁধ নির্মাণকাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা।
এরই মধ্যে ঘোষণা করা ৭৬টি প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের সভাপতি বাঁধ নির্মাণকাজ করবেন না মর্মে ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। পাউবো সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, হালির, বর্ধিত গুরমা ও আঙ্গারুলি হাওরের মধ্যে মহালিয়া, মাটিয়ান ও বর্ধিত গুরমা হাওরের ১৫ থেকে ২০টি প্রকল্পের এলাকাতে মাটির খুব সংকট। এ প্রকল্পগুলোতে মাটি আনতে হয় পাটলাই ও পাইকরতলা নদীর ওপার থেকে।
মাটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড টাকার পরিমাণে যে ব্যয় নির্ধারণ করে দিয়েছে, বাস্তবে তার দ্বিগুণ। এতে করে প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা বিগত বছরগুলোতে লাভের আশায় প্রকল্প নিলেও দিন শেষে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে।
১৫ জানুয়ারি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও কৃষকদের জমি রোপণের স্বার্থে হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বনুয়া হাওরের নাওটানা বাঁধটি কেটে দিয়েছিলেন ইউএনও। এতে করে হাওরের পানি কমায় বাঁধ নির্মাণকাজের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলেও টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েও কাজ না করার শর্তে ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছেন বর্ধিত গুরমা হাওরের ভান্ডারচাপর গ্রামের গোলাম নূর, মাটিয়ান হাওরের রতনশ্রী গ্রামের শাহ আলম, বড়দল নতুন হাটি গ্রামের শামছুজ্জামান, আনন্দনগর গ্রামের দুলাল মিয়া ও ইসলামপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অনেকেই বাঁধের কাজ করবেন না মর্মে ইউএনও আবেদন লিখে অফিস এলাকায় আসা-যাওয়া করছেন।
মাটিয়ান হাওরপারের রতনশ্রী গ্রামের শাহ আলম জানান, মাটিয়ান হাওরে তাঁকে যে প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল, সে প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণকাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণ করেছে, মূলত ব্যয় হবে তার দ্বিগুণ; যার কারণে তিনি প্রকল্পের কাজ ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদনের মাধ্যমে সমর্পণ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো.
কৃষকরা জানান, এমন সময় বাঁধের কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে ফসল নিয়ে বিপাকে পড়বেন তারা। সংশ্লিষ্টদের উচিত, দ্রুত সময়ের মধ্যে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান বের করা।
ইউএনও মো. আবুল হাসেম জানান, মাটিয়ান হাওর ও বর্ধিত গুরমা হাওরের কিছু অংশের বাঁধ নির্মাণকাজের মাটি আনতে হয় নদীর ওপার থেকে। তাও আবার নৌকা দিয়ে আনতে হয়। প্রকল্পের সভাপতিরা তাঁকে জানান, নির্মাণকাজে যে ব্যয় ধরা হয়েছে, বাস্তবে তাতে কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। এতে খরচ হবে নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে দ্বিগুণ। সম্প্রতি কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি বাঁধ নির্মাণের কাজ করবেন না বলে জানিয়েছেন লিখিতভাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র দ য় ত ব ক জ করত
এছাড়াও পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে
সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশে সকালে কক্সবাজারের নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাটে হাজির হয় ১১ পর্যটকের একটি দল। তবে ঘাটে পৌঁছানোর আগেই নির্ধারিত জাহাজ ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ঘাটে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। দলের একজন নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর ঘাটে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন ইউএনওকে গ্রেপ্তার করতে। যদিও বিষয়টি নিয়ে পরে বিপাকে পড়তে হয় ওই পর্যটক দলের সদস্যদের। আজ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, বাঁকখালী নদীর জোয়ার–ভাটা একেক সময় একেক রকম। জোয়ার–ভাটা বিবেচনায় নিয়ে জাহাজ ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। ইউএনওর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ওই পর্যটক ঘাটে এসে জাহাজ দেখতে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইব্রাহিম। তিনি হয়তো ঘাটে থাকা ইউএনওকে চিনতে পারেননি। সাধারণ নারী মনে করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়েছেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ইউএনওর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে আরেকটি জাহাজে পর্যটকদের ওই দল সেন্ট মার্টিনে যায়।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদরের ইউএনও তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে কেন জাহাজ ছেড়ে গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তি। এ সময় নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দাবি করে ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন, আমাকে গ্রেপ্তার করতে। এ ঘটনার ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেও এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলার এখতিয়ার রাখেন না।’
ইউএনও বলেন, পর্যটকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ে। কয়েকটি জাহাজে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়। জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন যাতে করা না হয়, সে বিষয়টি তদারকি করে ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি।
১ ডিসেম্বর কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে রাত্রী যাপনের সুযোগও রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটকদের সরকার ঘোষিত ১২টি নির্দেশনা মেনে চলতে হচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপটি ভ্রমণের সুযোগ থাকবে।