ভারতের দিল্লিকে বলা হয় ‘ধর্ষণের রাজধানী’। প্রতিদিন দেশটিতে প্রায় ১০০ নারী ধর্ষণের শিকার হন। এতেই বোঝা যায়, সেখানকার বাড়বাড়ন্ত ভয়াবহ ধর্ষণের চিত্র। এবার ভারতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নাজমা (২৪) নামে বাংলাদেশি এক নারী। বেঙ্গালুরুর এই ঘটনা ২৪ জানুয়ারির হলেও জানাজানি এর পরদিন (২৫ জানুয়ারি)।

ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, বেঙ্গলুরুতে ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। নিহত নারী বিবাহিত ছিলেন। তার স্বামী ব্রুহাত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকার পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তারা তিন সন্তানসহ শহরে বসবাস করতেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ওই অ্যাপার্টমেন্টে কাজ শেষে বের হওয়ার পরই তিনি নিখোঁজ হন। নাজমা তার স্বামীকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি আধ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর ফিরে আসেননি।

আরো পড়ুন:

আইএসআই কর্মকর্তাদের ঢাকা ‘সফরের গুজব’, নয়াদিল্লির পাত্তা

ভারতের ১০ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার

ধর্ষণের পর হত্যা ভারতের ‘জাতীয় সমস্যায়’ পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এক চিকিৎসক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পুরো ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজনীতিও গরম হয়ে যায়। এমনকি, ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) বলছে, গত ১০ বছরে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ২০২৩ সালে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ১২০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।

এ তো গেল সরকারি হিসাব। ডয়চে ভেলে বলছে, ভারতে ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, মান-সম্মানের ভয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীরা মুখ খুলতে চান না। সব মিলে ভারতে ধর্ষণের ভয়াবহতা ছিল, আছে এবং ক্রমেই তা যেন আরো বাড়ছে।

ভারতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। 

এদিকে, বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশিকে নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা ও তার লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সেখানে ভারতে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশটির সরকারকে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।

প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এখনো কেন ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে এর জবাব চাওয়া হলো না, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়া হবে না বলেও জানান তারা।
 
তারা বলেন, ‘‘এ দেশের মানুষ এখন ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানে। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখন এ দেশের মানুষ সোচ্চার।’’
 
এ ছাড়া, ফেলানী থেকে শুরু করে এ যাবৎ সব হত্যার বিচারের জোড় দাবি তোলা হয় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। তাদের অভিযোগ, ভারত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিয়ে একের পর এক বাংলাদেশবিরোধী কাজ করে যাচ্ছেন।
 

ঢাকা/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ