ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আপনারা কর পরিশোধ করুন। ভ্যাট-ট্যাক্স দেন। চেয়ার-টেবিলের নিচ দিয়ে আপনাদের কাছে অযৌক্তিক বা বেআইনিভাবে কেউ কিছু দাবি করবে না।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁও আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো.

হাফিজুর রহমান, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার এনবিআর চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ, রাজস্ব আহরণে সহায়তা করুন। কিন্তু জোর করে হাত মচড়িয়ে টাকা-পয়সা আদায় করবেন না। 

একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেনা পরিশোধ করুন। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, দেনা পরিশোধ করতে এলে কেউ কোনো অযৌক্তিক বা বেআইনি চাহিদা দাবি করবে না। অফিসিয়ালিও কোনো চাহিদা দাবি করা হবে না, আবার টেবিল বা চেয়ারের নিচে দিয়ে যে ধরনের কাজ হয়, সেই ধরনের কোনো চাহিদা ও দাবি করা হবে না। অতএব এই দুই বিষয়ে আশ্বস্ত করলে ব্যবসায়ীরা সহায়তা করবেন বলে মনে করি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ মুহূর্তে রাজস্ব আদায় ও ব্যয় দুটোই চ্যালেঞ্জিং। আয় করে নির্বিচারে ব্যয় করবো সেটা মোটেও ঠিক হবে না। যৌক্তিক ব্যয় করতে হবে। 

অর্থনৈতিক সংস্কারে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি আর্থিক খাতের সংস্কার করা। অর্থনৈতিক সংস্কার কঠিন, কারণ অনেকগুলো আইন-কানুন আছে, সেগুলো সংশোধন করতে হবে। তবে সংস্কার সহজও বটে। সংস্কার করতে সময় লাগবে। কিন্তু যেসব আইন বা প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলোর যথাযথ, সঠিক ও স্বচ্ছভাবে ব্যবহার করাই সবচেয়ে বড় কথা। এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা কঠিন কিছু নয়। সিস্টেম আছে। কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। 

জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে তা স্বীকার করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে এমন আলোচনা হয় মনে হবে যে বাংলাদেশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশই নাই মনে হয়। এই হচ্ছে না, ওই হচ্ছে না। আলুর দাম কমে গেছে, পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। চালের দাম বেড়ে গেছে। এমনভাবে বলা হয়, যেন চালের মণ এক হাজার টাকা কেজি হয়ে গেছে। সব জিনিসের দাম একসঙ্গে কমে গেছে, তা পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি। আবার সব জিনিসের দাম একেবারে বেড়ে যাবে তাও আশা করি না। তবে এটা ঠিক যে মানুষের কিছু কষ্ট হচ্ছে। অনেকের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে অনেক জিনিস থাকছে না। তবে সরকার চেষ্টা করছে। 

শুধু সমালোচনা নয়, প্রশংসা পাওয়ারও দাবি রাখে সরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এখন অনেকটা শিশুর মত। শিশুকে উৎসাহ দিলে শিশু ভালো করে। কিন্তু নিরুৎসাহিত করলে আরও ভেঙে পড়ে। ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো নিয়ে অনেজ কথা হচ্ছে। কিন্তু কেন বাড়ানো হলো ভেতরের সেই খবর সরকারের বলা সম্ভব হয় না। অতএব খারাপ কাজের ভৎসনা করার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও করা দরকার। তবে যারা ক্রিটিক্যাল মনের তারা সব জায়গায় দোষ খোঁজেন। 

এ সময় তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত এবং প্রক্রিয়ার দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। সময় বেশি নাই। আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ