Samakal:
2025-08-01@04:49:18 GMT

ভিন্ন রূপে শীতের হাওর

Published: 28th, January 2025 GMT

ভিন্ন রূপে শীতের হাওর

হিম হিম শীতের সকাল। জলের ওপর মেঘের মতো ভেসে থাকা কুয়াশার প্রলেপ। উড়ে যাওয়া অতিথি পাখির ঝাঁক– শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা যায় প্রকৃতির এমন আরেক রূপ; যে রূপ পরিচিত বর্ষার হাওরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। 
শীতের হাওরের ভিন্ন এই রূপ উপভোগ করতে ছোট দুই ভাইকে সঙ্গী করে গিয়েছিলাম টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে। যতবার হাওরে গিয়েছি, প্রতিবারই ভরা বর্ষায়। বর্ষায় জলে টইটম্বুর হাওরের রূপ বেশ জনপ্রিয় হলেও, শীতের হাওর অনেকেরই অজানা। শীতের টাঙ্গুয়ার হাওর মানেই এক ভিন্ন রূপ। এ সময় প্রকৃতি নিজেকে সাজায় একেবারেই নতুনভাবে। চারদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম। জলের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারি। দল বেঁধে এগিয়ে যাওয়া জেলে নৌকা। দূরের পাহাড়। তার ওপর ভেসে থাকা তুলার মতো মেঘের দল। কুয়াশার চাদর আর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা এক স্বর্গীয় প্রশান্তি! শহুরে কোলাহল থেকে দূরের এমন রূপ মনকে টেনে নেয় প্রকৃতির আরও কাছাকাছি। ভোলায় যান্ত্রিক সব ক্লান্তি। 
ভোরে সুনামগঞ্জ পৌঁছে অটোতে করে চলে গেলাম নৌকাঘাটে। নানা ধরনের সুবিধাসম্পন্ন বিশাল হাউস বোটে শুরু হয় আমাদের হাওর ভ্রমণের যাত্রা। সকালের সে সময়টায় হালকা রোদ উঠে গেলেও বাতাসে ছিল ফিনফিনে শীতলতা। সেই শীতলতা গায়ে মেখে হাউস বোটের ছাদে বসে নাশতা হয় খিচুড়ি, ডিম ভুনা আর মজাদার আচারের সঙ্গে। এক কাপ চা নিয়ে হাওরের মুগ্ধতায় হারিয়ে যাওয়া। দীর্ঘ যাত্রা বয়ে চলে জলের ওপর। কী অসাধারণ সেই অনুভূতি! অফ সিজন হওয়ায় বোট ও পর্যটকের সংখ্যা ছিল কম। সত্যি বলতে তা হাওরের সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করে রেখেছিল। আরও প্রাণভরে উপলব্ধি করা গেছে প্রকৃতির নৈকট্য। 
জলরাশির বুকে চলে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় বোট পৌঁছে যায় শিমুল বাগানে। মাথার ওপর তখন কড়া দুপুর। ক্ষুব্ধ সূর্যের উত্তাপ। শিমুল বাগানে ঢুকতেই মাথার ওপর শিমুল গাছের ছায়া পাওয়া যায়। যার বিস্তৃতি ১০০ বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে। অদূরেই দেখা যায় মেঘালয়ের পাহাড়ের সারি। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নৌকা সারানোর ঘাট। 
শীতে পানি কিছুটা কমে যায় বলে হাওরের সর্বত্র বোটে করে যাওয়া যায় না। যাদুকাটা নদী ও বারিক্কা টিলা যেতে হয় অটোতে করে। ভিন্ন এ অভিজ্ঞতা মন্দ লাগেনি আমাদের। অটোতে করে তিনজনে মিলে বারিক্কা টিলা যাওয়ার যাত্রাটাও উপভোগ করেছি আলাদাভাবে। বিকেলে বারিক্কা টিলায় বসে দূরের পাহাড় চূড়ায়, জলের ওপর, গাছের ওপর ধীরে ধীরে কুয়াশার প্রলেপ পড়তে দেখেছি। দেখেছি প্রকৃতির গায়ে সন্ধ্যা নামতে। এরপর রাত কেটে যায় জলের বুকেই। স্থির হাউস বোটে। কোলাহলহীন। যেন জাগতিক ঝুট-ঝামেলা থেকে চলে এসেছি অনেক দূরে। 
পরের সকাল শুরু হয় গা কাঁপানো শীত নিয়ে। কুয়াশায় চারদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মগভর্তি গরম কফি নিয়ে তিনজনই বসে যাই বোটের ছাদে। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন বোটের অন্য সদস্যরাও। পরে যে যার মতো অটো করে গিয়ে ঘুরে আসি শহীদ সিরাজ লেক। আশপাশের গ্রাম। বোটে ফিরে শুরু হয় আবারও যাত্রা। মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ্য ধীরে ধীরে দৃষ্টির আড়াল হয়। আমরা এগিয়ে চলি। মাঝে ছোট্ট বিরতি নিয়ে শেষ হয় গোসল পর্ব। পাহাড় থেকে বয়ে আসা শীতল জলে গোসল শেষে বোটে ফিরে দুপুরের খাওয়া হয় হাওরের টাটকা মাছ ভুনা, আলু ভর্তা, মুরগি ভুনা, পাতলা ডাল আর আচারে। স্থানীয় রাঁধুনির হাতে মজাদার রান্নায় খাওয়া হয় কব্জি ডুবিয়ে। এরপর স্নিগ্ধ হাওর দেখতে দেখতে ফেরার পথ ধরা। 
টাঙ্গুয়ার হাওর ও শীতে হাওরের সৌন্দর্য নিয়ে
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল জায়গাজুড়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই হাওর পরিযায়ী পাখি আর মাছের অভয়ারণ্য। বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে থাকে। শীত এলে পানি কমতে শুরু করে। ভরা শীতে হাওরের পানি তলানিতে ঠেকে। তখন হাওরের বড় একটা অংশই শুকিয়ে যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তৃতি ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের ১০টি মৌজা নিয়ে। ছোট-বড় ১২০টি বিল নিয়ে এ হাওর। প্রতি বছর শুধু শীতকালেই পৃথিবীর বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এ হাওরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয়।
বর্ষার হাওরের জনপ্রিয়তা তো রয়েছেই। হাওরের ভিন্ন রূপ উপভোগ করতে চাইলে শীতেও ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর। লালচে ফুলে ছেয়ে থাকা শিমুল বাগান। কুয়াশা মেখে থাকা গ্রাম-প্রকৃতি ও হিম হিম হাওয়ার স্নিগ্ধতা জড়ানো হাওর আপনাকে নিরাশ করবে না। v

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ