ভারতীয় বাংলা গানের শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী অঞ্জন দত্ত। অভিনয়, গান, পরিচালনা— সবক্ষেত্রে চর্চিত তিনি। তাকে নিয়ে ভক্তদের উৎসাহ অন্তহীন। অঞ্জন দত্ত কখনো বিশেষ রাখঢাক করে কথা বলেন না। এবার পপুলার আর্ট, রবীন্দ্রনাথের কাজ, সাহিত্য নিয়ে নিজের ভাবনার কথা অকপটে জানালেন।

কিছু দিন আগে কলকাতার একটি পডকাস্টে কথা বলেন অঞ্জন দত্ত। এ আলাপচারিতায় উঠে আসে আজকালের কলকাতার প্রসঙ্গ। পপুলার আর্ট প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত বলেন, “এটা হতে পারে যে, কিছু অভিনেতা থাকবেন যারা অতটা জনপ্রিয় নন। কিন্তু যে জনপ্রিয় অভিনেতা তাকে ভালো অভিনেতা হতে হবে। উত্তম কুমারকে ভালো অভিনেতা হতে হবে। তার কিছু ম্যানারিজম দিয়ে হবে না। একটা সময় পর্যন্ত হয়তো তার সেই ম্যানারিজম দেখছি। কিন্তু তারপর দেখেছি তিনি সেটার বাইরে চলে যাচ্ছেন। আলাদা কিছু দিচ্ছেন তার দর্শককে। চরিত্র দিয়ে আরম্ভ করছেন তিনি। বুঝতে পারছেন যে শুধু ম্যানারিজম দিয়ে হবে না। আমার কাছে পপুলার শিল্পকে শিল্পের উচ্চতর একটা ভাগ হতে হবে।”

পপ মিউজিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে টেনে আনেন কবীর সুমনকে। তার ভাষায়, “পপ মিউজিক তো কালচার চেঞ্জ করে দিল। বিটলসরা না এলে তো ওয়ার্কিং ক্লাসের গান তো হতো না। এগুলো তো জনপ্রিয়। সুমনের (কবীর সুমন) গান তো ৪ জন কবি, ৫ জন আঁতেল শুনছে না খালি; গোটা দুনিয়া শুনছে। হয়তো ভেতরের মানেটা অনেকে বুঝত পারছেন না। ‘তোমাকে চাই’-এ তোমাকেটা ‘কে’ হয়তো তা জানতে চাইছে। কিন্তু ভালো লাগছে। তাই আমার কাছে জনপ্রিয় শিল্পের মান উঁচু হওয়ার কথা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা তো দারুণ জনপ্রিয়। সবাই পড়ছে। সমরেশ মজুমদারের বই সবাই পড়ছে। হয়তো শঙ্কর বেশি সংখ্যক মানুষ পড়ছেন। কিন্তু তাই বলে তার লেখা তো নিচু মানের লেখা নয়। দারুণ লেখন শৈলী। কত কী জানা যায় তার লেখা থেকে।”

আরো পড়ুন:

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে ‘অশালীন অঙ্গভঙ্গি’, ক্ষুব্ধ শ্রীজাত

ছানার সন্দেশ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য বিশ্লেষণ করে অঞ্জন দত্ত বলেন, “বনফুল’, রমাপদ চৌধুরী সাংঘাতিক শক্তিশালী লেখক। বরং আমার মনে হয় না রবীন্দ্রনাথের গল্প, বড় গল্প খুব উঁচু মানের। গান যতটা উঁচু আর কি, সেই তুলনায়। গানটা না থাকলে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কতটা উঁচু হতো আমার ধারণা নেই। সেই তুলনায় সুনীল বাবু অনেক বেশি আধুনিক। এরা সবাই জনপ্রিয় লেখক। এটা হারিয়ে গেল কোথাও, যেটা আমাদের বাঙালিদের ছিল। জনপ্রিয় মানেই খারাপ জিনিস ভাবতে শুরু করল। জনপ্রিয় মানেই বাজার যেটা খাবে। কিন্তু আদতে তো শিল্প ঠিক করবে যে বাজার কী খাবে না খাবে। শিল্পী ঠিক করবে, শিল্পী সেটা তৈরি করে যেটা তার ভালো লাগে, বাজার কী খাবে সেটা ভেবে সেই কাজ করে না।” 

গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন অঞ্জন দত্ত। ১৯৯৮ সালে ‘বড়দিন’ সিনেমা পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। পরবর্তীতে আরো ২১টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ২০১১ সালে তার নির্মিত ‘রঞ্জনা আমি আর আসবোনা’ সিনেমাটি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র জনপ র য়

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ