সিরিয়ায় ক্ষমতা ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি ‍বিলুপ্ত করা হয়েছে। বুধবার দেশটির নতুন সামরিক পরিচালনা খাতের মুখপাত্র কমান্ডার হাসান আবদেল গনির এক ঘোষণায় দলটিকে বিলুপ্ত করা হয়।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার বরাতে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সামরিক পরিচালনা খাতের মুখপাত্র কমান্ডার হাসান আবদেল গনি বলেছেন, নির্বাচন হওয়ার আগপর্যন্ত আল-শারাকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করা হয়েছে। তাকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগপর্যন্ত আইন পরিষদ কার্যকর থাকবে।

আবদেল গনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী, নিরাপত্তাবাহিনী এমনকি আল শারার নিজের সশস্ত্র সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামসহ (এইচটিএস) সিরিয়ার সব সামরিক গোষ্ঠী বিলুপ্ত করা হয়েছে। একইভাবে দেশটির সংবিধান এবং বাশার আল-আসাদের দল বাথ পার্টিকেও বিলুপ্ত করা হয়েছে। বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে দলটি সিরিয়ার ক্ষমতায় ছিল। 

দামেস্কে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আল-শারাকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করার ঘোষণা আসে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আল-শারার এইচটিএসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী লড়াই করেছে, সেগুলোর কমান্ডারদের নিয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাশার আল-আসাদ সরকারের অবশিষ্ট অংশগুলোও ভেঙে দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে পার্লামেন্ট, সিরিয়ার পুরোনো সংবিধান এবং আল-আসাদের আরব সমাজতান্ত্রিক বাথ পার্টি।

বাথ পার্টির ঘোষিত লক্ষ্য ছিল, আরব রাষ্ট্রগুলোকে এক জাতিতে পরিণত করা। সিরিয়ার দুই আরব জাতীয়তাবাদী মিশেল আফলাক এবং সালাহ আল-দিন আল-বিতার দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে দলের প্রথম নীতিমালা গৃহীত হয়েছিল। এক সময় দলটি দুটি আরব দেশ ইরাক এবং সিরিয়া শাসন করেছিল।

সিরিয়ায় বাথ পার্টি বাশার আল-আসাদের পরিবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছিল, যারা ১৯৭০ সালে দেশটির ক্ষমতায় আসে। কয়েক দশক ধরে পরিবারটি সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে দলটিকে এবং এটির প্যান আরব মতাদর্শকে ব্যবহার করেছে। অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক পদে এই পরিবারের সংখ্যালঘু আলাউত সম্প্রদায়ের সদস্যরা অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং দলের সদস্যপদকে সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে জাতীয়তাবাদী চরিত্র দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।

বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার বাথ পার্টির অনেক নেতা গা ঢাকা দিয়েছেন কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। একটি প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবে সিরিয়ার নতুন শাসকেরা দামেস্কে বাথ পার্টির সাবেক প্রধান কার্যালয়কে একটি কেন্দ্রে পরিণত করা হয়, যেখানে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ও নিরাপত্তাবাহিনী সারি বেঁধে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন এবং অস্ত্র সমর্পণ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদ শাসনের অবসান হয়। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ষমত য় পর ব র আল শ র হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ