স্ত্রীকে নগ্ন হওয়ার নির্দেশ কি কানইয়ে অ্যালবামের প্রচার?
Published: 4th, February 2025 GMT
স্ত্রী মডেল বিয়াঙ্কা সেন্সরিকে নিয়ে এবাররে গ্র্যামির লাল গালিচায় হাজির হন মার্কিন র্যাপার কানইয়ে ওয়েস্ট। রোববার রাতে এই তারকা দম্পতির যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তাতে রীতিমতো অবক হওয়ারই মত। কারণ, পরনে ত্বকের রঙের ছোট পোশাক থাকলেও ক্যামেরায় বিয়াঙ্কার শরীর পুরোপুরি উন্মুক্ত বোঝা যাচ্ছিল। এমন বিতর্কিত কাণ্ড ঘটানোর জন্য নাকি স্ত্রী বিয়াঙ্কাকে নির্দেশ দেন কানইয়ে।
সিবিএস মর্নিং থেকে শেয়ার করা একটি ভিডিওযতে দেখা যায়, ক্যামেরার সামনে একটি কালো রঙের বিশাল বড় জ্যাকেট পরে আসেন বিয়াঙ্কা সেন্সরি। পাশে ছিলেন স্বামী কানইয়ে। ক্যামেরার সামনে দুজনকে কোনও গোপন আলোচনা করতে দেখা যায়। স্বামীর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই বিয়াঙ্কা পিছনে মুখ ফিরে দাঁড়ান এবং গায়ে থাকা কোট নামিয়ে দেন। কালো পোশাকটি সরে যেতেই বোঝা যায় একেবারে নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিয়াঙ্কা।
কনইয়ে তার স্ত্রীকে কী নির্দেশ দিয়েছিলেন তা বোঝা না গেলেও অনুমান করা হচ্ছে তিনি বলেছিলেন, এমন একটি দৃশ্য তৈরি করার জন্য যাতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। স্বামীর কাছ থেকে গায়ের কোট ফেলে দেওয়ার নির্দেশ পেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়েন বিয়াঙ্কা। এ ঘটনার পর এই দম্পতিকে আর অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। শোনা যাচ্ছে, সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কানইয়ে ও বিয়াঙ্কাকে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, ক্যামেরার সামনে নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল ইয়ের ‘ভুল্টুন ওয়ান’ অ্যালবামের প্রচার। অ্যালবামের কভারেও বিয়াঙ্কাকে এমন একটি পোশাকে দেখা যায়।
কেউ কেউ সেন্সরির মানসিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন, কেউ কেউ আবার বিয়াঙ্কাকে এই অসুস্থ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন। সূত্র: হিন্দুন্থান টাইমস।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু আসনে বিএনপির মনোনীতদের নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, বাদ পড়েছেন উল্লেখযোগ্য অনেকে
২৩৭টি আসনে ঘোষিত বিএনপির প্রার্থী তালিকাকে ‘ভারসাম্য’ রক্ষার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এতে অভিজ্ঞ নেতারা যেমন আছেন, তেমনি বিপুলসংখ্যক তরুণ মুখও রয়েছেন। তবে প্রার্থী তালিকায় এমন কিছু নামও এসেছে, যাঁদের নিয়ে আগে থেকে বিতর্ক বা প্রশ্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে মনোনয়ন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন মাঠের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিএনপি গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। হিসাবে দেখা যায়, প্রার্থী তালিকার ৮৩ জন তরুণ প্রার্থী। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ভবিষ্যৎ রাজনীতির চিন্তার চাপ দেখানোর চেষ্টা করছে।
তবে দলের নেতারা বলছেন, তরুণ প্রার্থীদের বেশির ভাগকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বিগত আন্দোলনে ভূমিকা দেখে। তবে প্রার্থী তালিকায় নতুনদের অনেকের পারিবারিক রাজনৈতিক পটভূমি রয়েছে—যেমন বাবা সংসদ সদস্য ছিলেন বা স্বামী জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ২৩৭ জনের মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ১০ জন, সংখ্যালঘু প্রার্থী মাত্র ৪ জন; যা ‘প্রতিনিধিত্বমূলক’ দায়িত্বের দিক থেকে নগণ্য। এবারের প্রার্থী মনোনয়নে এটাকে দুর্বল দিক মনে করা হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন-নবী খান সোহেল, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন মনোনয়ন পাননি।সোমবার বিকেলে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, অনেক আসনে মনোনয়ন নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তবে সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা প্রকাশ্যে কঠোর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ভেতরে-ভেতরে ক্ষোভ-দুঃখে ফুঁসছেন। তবে সাংগঠনিক খড়্গের ভয়ে অনেকে সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না।
তবে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ থেকে গতকাল মঙ্গলবার অন্তত সাত জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, সড়ক-রেলপথ অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলাগুলো হলো মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, নাটোর ও নওগাঁ। এর মধ্যে মেহেরপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
বিক্ষোভের মুখে মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। আগের দিন কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণার পর সোমবার রাতেই এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরাও সোমবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ কারণে স্থানীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রার্থী তালিকায় নতুনদের অনেকের পারিবারিক রাজনৈতিক পটভূমি রয়েছে—যেমন বাবা সংসদ সদস্য ছিলেন বা স্বামী জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ২৩৭ জনের মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ১০ জন, সংখ্যালঘু প্রার্থী মাত্র ৪ জন; যা ‘প্রতিনিধিত্বমূলক’ দায়িত্বের দিক থেকে নগণ্য। এবারের প্রার্থী মনোনয়নে এটাকে দুর্বল দিক মনে করা হচ্ছে।কিছু মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্নঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তেজগাঁও শাহিনবাগ এলাকার বাসিন্দা। এটি ঢাকা-১২ আসনে পড়েছে। তাঁকে এ আসনে প্রার্থী না করে কেন ঢাকা-১৪ আসনে প্রার্থী করা হলো, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তা ছাড়া সানজিদা ইসলাম নিজ এলাকা থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলের দীর্ঘদিনের মাঠকর্মী এস এ সিদ্দিক (সাজু)। তিনি প্রয়াত এস এ খালেকের ছোট ছেলে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় রাজনীতি ও নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে মোটাদাগে তিনটি বিষয় মাথায় রাখা হয়। এর অন্যতম হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা। এস এ খালেক মিরপুরের ওই এলাকার পুরোনো বাসিন্দা। এলাকায় ওই পরিবারের একটা প্রভাব আছে।
তা ছাড়া ঢাকার শিল্পাঞ্চল, কূটনৈতিক এলাকা, ক্যান্টনমেন্টসহ কিছু আসনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে শিক্ষিত, সৎ ও পেশাজীবী ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। ঢাকা-১২ আসনে বিএনপি প্রার্থী মনোনীত করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলমকে (নীরব)। যাঁর বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দখল ও অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠলে বিএনপি কমিটি ভেঙে দেয়। তাঁকেই আবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-১৫ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মো. শফিকুল ইসলাম খানকে। তাঁকে নিয়েও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন আছে। সেখানে যুবদল নেতা মামুন হাসান মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনের প্রার্থিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিলেট-৩ আসনে লন্ডনপ্রবাসী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল মালিককে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ১৯ বছর দেশে আসেননি। তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন আছে। সেখানে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
চাঁদপুর-২ আসনের প্রার্থী নিয়েও বিতর্ক আছে। সেখানে মো. জালাল উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ওই আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
এখানে গুমের শিকার পরিবারের সদস্য আছেন, ছাত্রদল-যুবদলের নেতারাও মনোনয়ন পেয়েছেন। অর্থাৎ নবীন-প্রবীণের সমন্বয় হয়েছে। আমরা মনে করি, একটি ভালো মনোনয়ন হয়েছে।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপিবাদ পড়লেন গুরুত্বপূর্ণরাগুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন-নবী খান সোহেল, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন মনোনয়ন পাননি। আবদুস সালাম ঢাকার মোহাম্মদপুর, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশাল, রুহুল কবির রিজভী রাজশাহী, হাবীব উন-নবী খান ঢাকায়, আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রামে ও কামরুজ্জামান রতন মুন্সিগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কোন বিবেচনায় তাঁদের প্রার্থী করা হয়নি, তা জানা যায়নি। তবে তাঁদের প্রার্থী না করায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন আছে।
তবে রুহুল কবির রিজভী গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সারা জীবন দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেছি। দল যা ভালো মনে করেছে, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা কেনবিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে একাধিক পেশাদার সংস্থার জনমত জরিপ এবং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা ও বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ আসনের প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির খুব বেশি ভূমিকা ছিল না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরতে পারেন। সেটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দু-চার দিন আগে-পরেও হতে পারে। সে লক্ষ্য থেকে কিছুটা আগেভাগে মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে; যাতে মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তফসিল ঘোষণার আগে প্রশমিত হয়ে যায় এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর এ নিয়ে যাতে আর কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকে।
অন্যদিকে তারেক রহমান দেশে ফেরার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হবে, সেটি নির্বাচনের কাজে লাগানোও বিএনপির লক্ষ্য রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, ভোটে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের উপস্থিতি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উজ্জীবিত করবে।
বিএনপির রাজনীতির চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির জন্মের পর থেকে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগবিরোধী মঞ্চের যে সুবিধা পেয়ে আসছে, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং তাদের যে তৎপরতা, এখন থেকে সেটারও মোকাবিলা করতে হবে বিএনপিকে। সে রকম একটা জায়গা থেকে এবারের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ রাজনীতির কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
তবে বিএনপির নেতাদের প্রাথমিক যে হিসাব বা বিবেচনা, তাতে এনসিপি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ছাড়া বাকি দল ও জোটগুলো থেকে ২০ থেকে ২৫টি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার মতো প্রার্থী রয়েছেন।প্রার্থী না দেওয়া ৬৩ আসনজাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬৩টি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এর মধ্যে কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু জোটের জন্য রাখা আসনগুলোতে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা চলছে। যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের কাছে পরিষ্কার নয়, যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী কিছু দল ও জোটের বাইরে শেষ পর্যন্ত আর কাদের পাশে পাচ্ছেন তাঁরা।
ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ কিছু দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে। এর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নুরুল হকের গণ অধিকার পরিষদ ও মাওলানা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ব্যাপারে বিএনপির আগ্রহ আছে। দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ চলছে। সব মিলিয়ে বিএনপি কতটি আসন জোটের শরিকদের জন্য ছাড়বে বা শেষ পর্যন্ত কারা কারা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, সেটি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে প্রার্থী ঘোষণায় যাচ্ছে না বিএনপি।
তবে বিএনপির নেতাদের প্রাথমিক যে হিসাব বা বিবেচনা, তাতে এনসিপি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ছাড়া বাকি দল ও জোটগুলো থেকে ২০ থেকে ২৫টি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার মতো প্রার্থী রয়েছেন।
বিবেচনায় যাঁরাএখন পর্যন্ত যে তথ্য, তাতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের জন্য বেশ কিছু আসন খালি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আ স ম রবের জন্য লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, জোনায়েদ সাকির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থর জন্য ঢাকা-১৭, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরের জন্য পটুয়াখালী-৩, রাশেদ খানের জন্য ঝিনাইদহ-২, ফারুক হোসেনের জন্য ঠাকুরগাঁও-২ আসন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের এহসানুল হুদার জন্য কিশোরগঞ্জ-৫, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের জন্য পিরোজপুর-১, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের জন্য নড়াইল-২, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের জন্য কুমিল্লা-৭, অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য চট্টগ্রাম-১৪, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের জন্য লক্ষ্মীপুর-১ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-৪ (শিবগঞ্জ) নির্বাচন করতে চেয়েছেন। ওই আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখন তাঁকে ঢাকায় বা অন্য কোন আসনে প্রার্থী করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
অনন্ত ১২টি আসন চায় জমিয়তযুগপৎ আন্দোলনের বাইরের দলগুলোর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির কাছে একটি প্রার্থী তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে দলের আমির উবায়দুল্লাহ ফারুকের জন্য (সিলেট-৫), মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী (নীলফামারী-১), কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী (সিলেট-৪), জুনায়েদ আল হাবিব (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), মনির হোসেন কাসেমী (নারায়ণগঞ্জ-৪), মোখলেছুর রহমান চৌধুরী (কিশোরগঞ্জ-১), শোয়ায়েব আহমদ (সুনামগঞ্জ-২) ও তালহা ইসলাম (নড়াইল-২) উল্লেখযোগ্য।
এ আসনগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আসনগুলো কাদের জন্য রাখা হয়েছে, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে জমিয়তের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১২টি আসন ছাড়া তাঁরা জোটে যাবেন না।
মাওলানা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কোন দিকে যাবে, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে তিনি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকার মোহাম্মদপুর, লালবাগ ও বাগেরহাটের একটি আসন থেকে নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন। তিন জায়গাতেই বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
জোটের প্রার্থী ঠিক করার চেষ্টা২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে ২২টি আসন দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে। এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে জামায়াতকে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি বিগত যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা দলগুলোকে আসন ছাড়ের বিষয়ে হিসাব কষছে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে জোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেছেন, যাঁরা বিগত ১৫-১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, জেল খেটেছেন, অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁদের সমন্বয়ে ২৩৭টি আসনে প্রার্থিতা দেওয়া হয়েছে। এটি বিএনপির জন্য একটি বড় কাজ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে গুমের শিকার পরিবারের সদস্য আছেন, ছাত্রদল-যুবদলের নেতারাও মনোনয়ন পেয়েছেন। অর্থাৎ নবীন-প্রবীণের সমন্বয় হয়েছে। আমরা মনে করি, একটি ভালো মনোনয়ন হয়েছে।’