হোসিয়ারী সমিতি নির্বাচনে বদু’র প্যানেল বিজয়ী
Published: 4th, February 2025 GMT
শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী সেক্টরের সবচেয়ে প্রেস্ট্রিজিয়াস নির্বাচনে নয়ামাটি, উকিলপাড়াসহ হোসিয়ারী এলাকার জনপ্রিয় নেতা আলহাজ্ব বদিউজ্জামান বদু’র প্যানেল বিজয়ী হয়েছেন।
বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন পরিচালনা পর্ষদ ২০২৫-২৭ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। নয়ামাটি, দেওভোগ, টানবাজার ও উকিলপাড়াসহ পুরো হোসিয়ারী এলাকায় আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে ১৮ টি পদের জন্য ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর রেজাল্ট ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে হোসিয়ারী মালিক ঐক্যজোট প্যানেল থেকে ১৮জন, স্বতন্ত্র হোসিয়ারী মালিক ঐক্য ফোরাম থেকে ১৪ এবং স্বতন্ত্র থেকে ৪জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন।
নির্বাচনে এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে ৬জন নির্বাচিত হয়েছেন। হোসিয়ারী মালিক ঐক্যজোটের প্যানেল থেকে সাইফুল ইসলাম হিরু শেখ (নিউ শেখ হোসিয়ারী) ৮৬২ ভোট, সাঈদ আহমেদ স্বপন (সেহেলী হোসিয়ারী এন্ড গার্মেঃ) ৭১৯ ভোট, আলহাজ্ব মো.
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে নির্বাচিত হয়েছে আবদুস সোবহান তালুকদার (আদর হোসিয়ারী) ৫৭৫ ভোট, মো. বিল্লাল হোসেন (সেভেন স্টার হোসিয়ারী) ৪৯৫ ভোট পেয়ে।
এদিকে জেনারেল গ্রুপে ১২ জন নির্বাচিত হয়েছে। হোসিয়ারী মালিক ঐক্যজোট প্যানেল থেকে আলহাজ্ব বদিউজ্জামান বদু (বদিউজ্জামান টেক্সটাইল) ৮৯৩ ভোট, মোঃ আবদুল হাই (নিউ বৃষ্টি টেক্সটাইল) ৮২৭ ভোট,মোঃ মিজানুর রহমান (সায়মন হোসিয়ারী) ৮০৫ ভোট, মোঃ পারভেজ মল্লিক (নিউ লিপি হোসিয়ারী এন্ড গার্মেন্টস)৭৮৭ ভোট, আবদুস সবুর খান (সাকলাইন টেক্সটাইল) ৭৮৩ ভোট, হাজী মোঃ শাহীন হোসেন (শাহীন ট্রেডার্স) ৭৫১ ভোট, মোঃ আতাউর রহমান (গনি হোসিয়ারী এন্ড গার্মেন্টস) ৭২৭ ভোট,আলহাজ্ব মোঃ মনির হোসেন (নিউ মনির হোসিয়ারী) ৭২০ ভোট,মোঃ দুলাল মল্লিক (আদর ট্রেডার্স) ৬৯০ ভোট, মোঃ মাসুদুর রহমান (আবীর ফ্যাশন) ৬০৫ ভোট ও বৈদ্যনাথ পোদ্দার (নিউ দূরস্থ হোসিয়ারী) ৫৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র হোসিয়ারী মালিক ঐক্য ফোরাম থেকে ফতেহ মোহাম্মদ রেজা (ফতেহ হোসিয়ারী) ৬৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে হোসিয়ারী এসোসিয়েশন নির্বাচন কমিশনের সভাপতি, জাসাস জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুল ইসলাম সানি বলেছেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আনন্দঘন পরিবেশে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন। নির্বাচনে এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে ৬জন ও জেনারেল গ্রুপ থেকে ১২ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। রাতেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ভোটের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষনা করেন।
এর আগে, উৎসবমুখর পরিবেশে সোমবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্মাণাধীন ভবনে, বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন ২০২৫-২৭ ভোট কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে মোট ১ হাজার ১৫৯ জন ভোটারদের মধ্যে ভোট পড়েছে ১ হাজার ১১৩ টি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মনে ৯৬.০৩ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন ২০২৫-২৭। সোমবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্মাণাধীন ভবনে ভোট কার্যক্রম পরিচালনা হয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র ব চ ত হয় ছ ন স বতন ত র আলহ জ ব
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।