রাজবাড়ীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি দীর্ঘ ৩০ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। এতে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাস টার্মিনালের অবকাঠামো, আসবাব ও অন্য মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হলে এখানে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।

স্থানীয় লোকজন এবং বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজবাড়ী শহর থেকে দূরে হওয়ায় এবং যেখানে টার্মিনাল, সেখানে যাত্রী না পাওয়ায় বাসমালিকেরা টার্মিনাল ব্যবহার করছেন না। এতে টার্মিনালটি বেশ কয়েকবার চালু করলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়।

জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৯৯৪ সালে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী জেলা বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪ একর ২০ শতাংশ জায়গায় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৪ সালের ১৯ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহানারা বেগম এটি উদ্বোধন করেন। কিছুদিন চালু থাকার পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সালে টার্মিনালটি জেলা পরিষদ থেকে রাজবাড়ী পৌরসভায় হস্তান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টার্মিনালটি আবার চালু করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে টার্মিনালটি পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।

বাসমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজবাড়ী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ পৌরসভা থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে টার্মিনাল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে শহরের মুরগির ফার্ম এলাকায় বাস রাখার ব্যবস্থা করেছে। সেখানে পার্কিং চার্জ বাবদ প্রতিটি বাস থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক লিটনের নামে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বাস টার্মিনালের ১০টি টিকিট কাউন্টারসহ ১৫টি কক্ষের দরজা–জানালা ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাস টার্মিনাল ভবনের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে। টার্মিনালের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। চারপাশ আগাছা-জঙ্গলে ভরে গেছে।

জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।’

কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক বলেন, টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় পরিবহনমালিক বা সংগঠনের নেতাদের স্বার্থে বর্তমানে রাজবাড়ী শহরের মুরগির ফার্ম, বড়পুল ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের কার্যালয়ের সামনে মহাসড়ক থেকে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। বাস কাউন্টার করা হয়েছে মালিক গ্রুপের কার্যালয়ের নিচতলায়।

রাজবাড়ী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সদস্য পরিমল কুমার সাহা বলেন, ‘ তিন চাকার যানগুলো টার্মিনাল ওভারটেক করে শহর থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের মতো আমরাও শহরের বড়পুল ও মুরগির ফার্ম এলাকার সড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাই।’ 

পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মল্লিকা দে বলেন, ‘তিনি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে টার্মিনালটি চালুর উদ্যোগ নেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ