আ’লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন অন্যায্য
Published: 7th, February 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়। রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং সম্পত্তি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
গত বৃহস্পতিবার সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি এ বিবৃতি দেন। ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছেন’ শীর্ষক বিবৃতিতে মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এইচআরডব্লিউ মনে করে, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার দেখতে আগ্রহী জনগণের জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা উচিত, যা সহিংসতা ও প্রতিশোধের বদলে একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবে।
বিবৃতি বলা হয়, তথাকথিত ‘বুলডোজার শোভাযাত্রা’ নামে ঘোষণা দিয়েই হামলা চালানো হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুমসহ ১৫ বছরের দমন-পীড়নের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে অন্যায্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল। তাঁর সরকার গণঅভ্যুত্থানে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। ফলে ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।
এসব কারণে আওয়ামী লীগের সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তা ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়। বাংলাদেশের আবারও মারাত্মক দমন-পীড়নের দিকে ঝুঁকে পড়া উচিত নয় বলে মনে করে এইচআরডব্লিউ।
৩২ নম্বরে হামলা প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, এমন সময়ে ভাঙচুর হলো, যখন হাসিনা তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে অনলাইনে ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার আগে ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে হবে।
বর্তমান সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির জবাবদিহির বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ইউনূসের প্রশাসন ক্ষুব্ধ নাগরিকদের দিক থেকে নানা চাপের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী বা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারের বিক্ষোভের মতো চাপও রয়েছে। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
তবে এ সরকার এখনও সংখ্যালঘু বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিশেষ করে আতঙ্কে থাকা হিন্দুদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। আগের সরকারের আমলে বেআইনিভাবে বিরোধী মতের মানুষকে আটক রাখার স্থানগুলো পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রমাণ ধ্বংস করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার নিন্দা জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এই নির্মম দৃশ্য জাহেলিয়াতের লোমহর্ষক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতাকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশবিক এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘৯ জুলাই বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে মো. সোহাগ নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মাথায় পাথর মেরে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যা করে তারা শুধু সোহাগকে উলঙ্গই করেনি, তাঁর লাশের ওপর নৃত্য করে আনন্দ–উল্লাসও করেছে।’
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এসেছে, চকবাজার থানা যুবদলের কয়েকজন নেতা নিহত সোহাগের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে যুবদলের সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দেশবাসীর প্রশ্ন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের লালনপালনকারী দলের নেতারা যে রাজনীতির কথা বলে বেড়ান, সেই দলের হাতে জনগণের জানমাল কতটা নিরাপদ? এই দলের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না।
এ ঘটনায় আবার সেই পতিত ফ্যাসিবাদেরই পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সরকারকে এই সব দুর্বৃত্তদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে এবং দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন গোলাম পরওয়ার।
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি
এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে দলটি। এক বিবৃতিতে এবি পার্টির নেতারা বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। অথচ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত সারা দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে আবারও গণ–অভ্যুত্থানপূর্ববর্তী পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে এবি পার্টির নেতারা বলেন, ‘দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রশাসন কোথাও অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। রাজধানীসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারা অপরাধ করছে, রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে সরকারকে আবারও নতুন করে জনরোষের মুখোমুখি হতে হবে।’
অবিলম্বে সারা দেশে কম্বাইন্ড (সমন্বিত) অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের গ্রেপ্তার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান নেতারা।
আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন নৃশংসতার রাজনীতি চলতে পারে না২ ঘণ্টা আগেগণ অধিকার পরিষদের নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিপুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত। অবিলম্বে এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘এ ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নয়, মানবতা, আইন, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত। জনসমক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে একজন মানুষকে হত্যা করা কেবল নৃশংসতাই নয়, এটি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্ট করে তুলেছে যে দেশের নাগরিক নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।’