সাত থানায় সাত মামলা, আসামি ৩৩৬ জন
Published: 9th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামলার জালে জড়িয়ে পড়েছেন। জেলার ১২ উপজেলায় প্রতিদিনই তাদের কেউ না কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জেলার সাতটি থানায় দায়ের করা সাতটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই সংগঠনের ৩৩৬ জন নেতাকর্মীকে।
সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এই সংগঠনের অনেকেই ৫ আগস্টের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। এখন কেবল দেশের বাইরে থেকে ফেসবুকে মন্তব্য ছুড়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর জেলার ১২ উপজেলার সাতটিতে দায়ের করা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ১৫১ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলা দায়েরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কম সক্রিয় এ সংগঠনের কর্মীরা। এ সংগঠনকে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং এই আইনের তপশিল-২ এ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামের ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।’
এ ঘোষণার পর সুনামগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালান সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। তাহিরপুর উপজেলাসহ কিছু উপজেলায় বিজয় দিবসের কর্মসূচি উদযাপনের নামে তৎপর হন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এরপরই তাদের দমনে অধিক সক্রিয় হয় পুলিশ। মামলায় জড়িয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
সর্বশেষ তথ্য মতে, সুনামগঞ্জ সদর থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী পুলিশ। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ শহরতলির মাইজবাড়ির আতাহার সুমন নয়ন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
এ মামলায় ওই সংগঠনের জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি জিসান এনায়েত রাজা চৌধুরী, আজিজ পাঠান ও জ্যোতির্ময় বণিক দীপ্তসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে নভেম্বরের ২ তারিখ দোয়ারাবাজার থানায় এ সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জনের নামোল্লেখ করে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ মামলার আসামি। এ মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে জগন্নাথপুর থানায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতা মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্মপাশায় গেল মাসের ৫ তারিখে দায়ের করা নাশকতার মামলায় আসামি করা হয় ১৮ জনকে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি ১৫ থেকে ২০ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ জন।
শান্তিগঞ্জে গেল ৪ ডিসেম্বর মামলা হয়। এ মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এপিএস জুয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে মামলার অজ্ঞাতপরিচয় আসামি উল্লেখ করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের ৫ নেতার নাম উল্লেখসহ ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় এ মামলায়। এখানে গ্রেপ্তার আছেন ৪ জন।
তাহিরপুরে ১৭ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আছেন ৭ থেকে ৮০ জন। তাদের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মধ্যনগর থানায় ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা হয়। এ উপজেলায় গ্রেপ্তার তিনজন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ সরব দেখা যায়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝেরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি জানান, সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ও এভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। ছাত্রদলের ওপর নাশকতার মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। এখন সেটি তাদের ছেলেরা ভোগ করছে। এক সময় তাদের ছাত্র সংগঠনও নিষিদ্ধ থাকবে না– বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ গ র প ত র কর জন র ন ম ল ল খ কর দ য় র কর ন ত কর ম উপজ ল য় এ স গঠন স গঠন র ন শকত আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত