সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামলার জালে জড়িয়ে পড়েছেন। জেলার ১২ উপজেলায় প্রতিদিনই তাদের কেউ না কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জেলার সাতটি থানায় দায়ের করা সাতটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই সংগঠনের ৩৩৬ জন নেতাকর্মীকে। 

সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এই সংগঠনের অনেকেই ৫ আগস্টের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। এখন কেবল দেশের বাইরে থেকে ফেসবুকে মন্তব্য ছুড়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর জেলার ১২ উপজেলার সাতটিতে দায়ের করা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ১৫১ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলা দায়েরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কম সক্রিয় এ সংগঠনের কর্মীরা। এ সংগঠনকে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। 

এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং এই আইনের তপশিল-২ এ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামের ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।’

এ ঘোষণার পর সুনামগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালান সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। তাহিরপুর উপজেলাসহ কিছু উপজেলায় বিজয় দিবসের কর্মসূচি উদযাপনের নামে তৎপর হন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এরপরই তাদের দমনে অধিক সক্রিয় হয় পুলিশ। মামলায় জড়িয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

সর্বশেষ তথ্য মতে, সুনামগঞ্জ সদর থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী পুলিশ। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ শহরতলির মাইজবাড়ির আতাহার সুমন নয়ন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

এ মামলায় ওই সংগঠনের জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি জিসান এনায়েত রাজা চৌধুরী, আজিজ পাঠান ও জ্যোতির্ময় বণিক দীপ্তসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে নভেম্বরের ২ তারিখ দোয়ারাবাজার থানায় এ সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জনের নামোল্লেখ করে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ মামলার আসামি। এ মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে জগন্নাথপুর থানায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতা মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্মপাশায় গেল মাসের ৫ তারিখে দায়ের করা নাশকতার মামলায় আসামি করা হয় ১৮ জনকে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি ১৫ থেকে ২০ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ জন।

শান্তিগঞ্জে গেল ৪ ডিসেম্বর মামলা হয়। এ মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এপিএস জুয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে মামলার অজ্ঞাতপরিচয় আসামি উল্লেখ করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের ৫ নেতার নাম উল্লেখসহ ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় এ মামলায়। এখানে গ্রেপ্তার আছেন ৪ জন।

তাহিরপুরে ১৭ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আছেন ৭ থেকে ৮০ জন। তাদের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মধ্যনগর থানায় ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা হয়। এ উপজেলায় গ্রেপ্তার তিনজন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ সরব দেখা যায়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝেরেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি জানান, সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ও এভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। ছাত্রদলের ওপর নাশকতার মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। এখন সেটি তাদের ছেলেরা ভোগ করছে। এক সময় তাদের ছাত্র সংগঠনও নিষিদ্ধ থাকবে না– বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ গ র প ত র কর জন র ন ম ল ল খ কর দ য় র কর ন ত কর ম উপজ ল য় এ স গঠন স গঠন র ন শকত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

হাবিব ও সজীবের জল্লারপাড় লেকে জমজমাট মাদক বানিজ্য

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের জল্লারপাড় এলাকায় হাবিব ওরফে পিচ্চি হাবিব (মাদকসহ ৫/৭টি মামলার আসামি), একটা খুনি পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা ভয়ংকর সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গাং লিডার। 

বাবা মৃত কমল মিয়া এক সময় পুলিশের সোর্স ছিলেন যে কিনা খুন হয় নিজ সৎ ছেলের হাতে। হাবিবের বড় ভাই মানিক এলাকার জনি নামের এক ছেলেকে খুন করে যাবজ্জীবন সাজায় জেল খাটছে।

হাবিব ৫ই আগস্ট এর আগে আজমীর ওসমানেরক্যাডার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলো। গণঅভ্যূত্থানের আগে এলাকায় বড় করে ১৫ আগস্ট পালন ও নাসিম ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন এবং ওসমান পরিবারের পালিত ক্যাডারদের দাওয়াত করে মহড়া দেয়ার ছবি ও বিভিন্ন মিছিল মিটিং এর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। 

ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর সে যোগ দেয় বিএনপিতে। এলাকার বিএনপি'র বিভিন্ন নেতা ও দেওভোগের অনেক নেতার দেখা মিলে হাবিবের অফিসে ও আড্ডায়। অনেকেই আসে হোন্ডার বহর নিয়ে যার ফলে এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলেনা। মানুষকে আতঙ্কে রাখতে হাবিবকে দেখা যায় নিজে বড় বড় ছুড়ি নিয়ে মহড়া দিতে। 

হাবিবকে শেন্টার দিচ্ছে বিএনপি'র ক্যাডার গাল কাটা জাকিরের ছোট ভাই ডাকাত সজিব। ডিস বাবুর নির্দেশে ডাকাতি করতে যাওয়া সজিব ডাকাতি মামলায় ৯বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি, হাইকোর্ট থেকে আপিল করে জামিনে আছে। সদর থানায় ৪/৫ টির বেশি মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। হাবিব ও সজীব নারায়ণগঞ্জে আজমির ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। 

৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদাররা এলাকা ছাড়লেও হাবিব ও সজীব এলাকায় আছে বহাল তবিয়তে। এর কারণ হাবিবের মাদক ব্যবসার অডেল টাকা ও তাদের দুজনের ক্ষমতা। মাদকের টাকায় হাবিব করেছে এলাকায় আলিশান  দুইতালা বাড়ি। হাবিব ও সজীবের আয়ের উৎস হল  তারা পাইকারি হিরোইন ইয়াবা ও গাজা ব্যবসায়ী। 

এক নং বাবুরাইল, ২ নং বাবুরাইল, জিমখানা, পাইকপাড়া, নলুয়াপাড়া, ঋষিপাড়া সব জায়গায় হাবিব ও সজীবের মাদক বিক্রি হয়। হাবিবের দখলকৃত সবচেয়ে বড় স্পট হলো জিমখানা পানির টাংকি যা ফাইম ও সায়েম দেখে। এসব স্পটে দৈনিক লাখ লাখ টাকার নেশা বিক্রি হয়। 

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এখান থেকে মাসোহারা পৌঁছে যায় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার পকেটে সেই সাথে নামধারী সাংবাদিকদের কাছে মাসোহারা পৌছে। জনশ্রুতি রয়েছে, এসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও কথিত সাংবাদিকদের দাপটে হাবিব ধরা ছোঁয়ার বাইরে। 

হাবিবের প্রধান সেলসম্যান মিলন ও মাসুম ওরা একাধিকবার ডিবির কাছে গ্রেফতার হয় পরে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে ছাড়া পায়। ওদের দুজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে বিভিন্ন তথ্য।

এলাকায় একাধিকবার অভিযান পরিচালনা হলেও হাবিবকে ধরতে পারছে না প্রশাসন এর কারণ পুরো এলাকা বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা জল্লারপাড় মসজিদের সামনে বিভিন্ন দোকানদার তাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় এলাকায় পুলিশ আসছে, প্রশাসন ঢোকার আগেই হাবিব সটকে পড়ে। এলাকা ঘনবসতি হওয়ায় লুকিয়ে যায় অন্য কারো ঘরে এজন্য প্রশাসন ধরতে না পড়ে চলে আসে। 

এলাকার সবাই রাতে যখন ঘুমায় তখন তার বিচরণ দেখা যায় বিভিন্ন অলিতে গলিতে। গভীর রাতে সঙ্গী সহ অনেক পাওয়ারের টর্চ লাইট ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র  সাথে থাকে ডাকাত সজিব ও কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। হাবিব ও সজীবের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্যের জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগও। 

একাধিক বাড়ির মালিক তাদের বাড়ির কাজ করতে পারছে না তাদের দুজনের জন্য। চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ। চাঁদা দিয়ে মীমাংসা করলেই বাড়ির কাজ করতে পারছেন। অন্যের কেনা বাড়িতে সাইনবোর্ড  ঝুলিয়ে দিচ্ছে তারা দুজন জায়গার দাবি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। 

এলাকাবাসী এখন হাবিব ও সজীবের হাতে জিম্মি। সবাই এর থেকে মুক্তি চায়। হাবিব এতটাই ধুরন্দর যে প্রশাসনে হাত থেকে বাঁচার জন্য ৫ ই আগস্ট এর পর এলাকায় ওয়াইফাই ব্যবসা দিয়েছে, তার সেলসম্যান মাসুম এই ব্যবসার ম্যানেজার সে সম্পূর্ণ ব্যবসা দেখাশোনা করছে। মাসুমেরও বিভিন্ন  ছবি আছে আজমির ওসমানের মিছিলে ও ১৫ ই আগস্টের খিচুড়ির বিতরনের অনুষ্ঠানে। 

ছাত্র আন্দোলনের সময়  হাবিব, সজীব ও মাসুম তাদের সবারই ওসমান পরিবারের পক্ষে ছিল নজর কাড়া ভূমিকা। মোট কথা এলাকাবাসী এখন সম্পূর্ণ জিম্মি হাবিব ও সজীবের কাছে।

নারায়ণগঞ্জের সব মাদকের স্পটে অভিযান হলেও জল্লারপাড়ায় হাবিবের মাদকের স্পটে কেন অভিযান হচ্ছে না এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকাবাসী দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে তারা হাবিব ও সজীবের জিম্মি থেকে মুক্তি হতে চায়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাবিব ও সজীবের জল্লারপাড় লেকে জমজমাট মাদক বানিজ্য
  • রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই