কুড়িগ্রামের রাজীবপুর-চিলমারী নৌপথে ব্রহ্মপুত্র নদে ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিলমারী উপজেলার কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌ পুলিশের সামনে দুটি নৌকায় ডাকাতি করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে চলে যায় ডাকাত দল।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি কড়াইবরিশাল এলাকায় যাত্রীবাহী নৌকায় এবং গত ২১ ডিসেম্বর চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুই শ বিঘার চরের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

চিলমারী বন্দর রমনা নৌঘাট কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুরে রাজীবপুরের কোদালকাটি ও পাখিউড়া থেকে চিলমারী অভিমুখে ছেড়ে আসা দুটি নৌকা চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে পৌঁছালে এক দল ডাকাত ট্রলার নিয়ে নৌকা দুটির গতি রোধ করে। পরে তারা ডাকাতি শুরু করে। ডাকাতেরা গু‌লি ছুড়তে ছুড়তে নৌকায় থাকা যাত্রী ও গরু ব‌্যবসায়ী‌দের কা‌ছ থে‌কে ক‌য়েক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় খেয়াঘা‌টে এক‌টি নৌকায় চিলমারী থানা-পু‌লিশের ক‌য়েকজন সদস‌্য থাক‌লেও তাঁরা নির্বিকার ছিলেন।

নৌ পুলিশের সামনে ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা নৌ থানার ওই পুলিশের নৌকা আটক করেন। পরে চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনেন।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ২টি নৌকায় ডাকাতির ঘটনায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা ডাকাত দল নিয়ে গেছে। ডাকাতির সময় একটি নৌকার এক যাত্রী আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন। পরে আহত ওই যাত্রীকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত যাত্রীর নাম আমিনুল ইসলাম। তিনি রৌমারী উপজেলার কোমড়ভাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা।

চিলমারী ঘাটের মাস্টার আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিলমারী ইউনিয়নের ওই এলাকা পাশের গাইবান্ধা জেলার সীমান্তঘেঁষা। বিভিন্ন সময় ওই এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমরা অনেকবার চিলমারী নৌ থানার কাছে মৌখিক আবেদন করেছিলাম, অন্তত জোড়গাছ হাটের দিন সেখানে কিছু পুলিশ রাখার। কিন্তু তারা (পুলিশ) আমাদের কথা শোনে না। ১০ দিন আগেও সেখানে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ আবারও ব্যবসায়ীদের কাছে ডাকাতি করে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে গেল।’

ভুক্তভোগী যাত্রী ও স্থানী বাসিন্দারা জানান, যখন ডাকাতেরা ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে ডাকাতি করে, তখন ঘটনাস্থল থেকে ২০০–৩০০ মিটার দূরেই নৌ পুলিশের কয়েকজন সদস্য ছিলেন। তবে তাঁদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না, ডাকাতদের হাতে অস্ত্র ছিল। তাই ডাকতেরা ডাকাতি করে তাঁদের সামনে দিয়েই গুলি ছুড়তে ছুড়তে চলে যায়।

ডাকাতির শিকার একটি নৌকার মাঝি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ডাকাতদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ও বন্দুক ছিল। তারা এসে গুলি করেছে। পরে ভয়ে কয়েকজন পানিতে লাফ দিয়েছেন। ডাকাত দল নৌকায় থাকা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে গুলি করতে করতে চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, ডাকাত দলে ১০ থেকে ১৫ জন ছিল। তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় তাঁরা কিছুই করতে পারেননি।

এ ঘটনায় চিলমারী নৌ পু‌লি‌শ ফাঁড়ির এএসআই সে‌লিম সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে চিলমারী মডেল থানার ওসি মোশাহেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে আছি। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলছি। স্থানীয় বাসিন্দারা ভুল বুঝে পুলিশের নৌকা আটক করে রেখেছিলেন, পরে ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা থানায় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন ড ক ত দল ব যবস য় র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে মধ্যরাতে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের ৪ নেতাকে বহিষ্কার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ ও টায়ারে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনার পর এ সিদ্ধান্ত এল।

রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি বিএনপির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, সীতাকুণ্ড পৌরসভার আহ্বায়ক মো. মামুন, যুবদলের সোনাইছড়ীর সাধারণ সম্পাদক মমিন উদ্দিন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজের পোস্টে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পরে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কদমরসুল, ভাটিয়ারী বাজার, জলিল গেট এলাকায় সহিংসতা, হানাহানি ও রাস্তা অবরোধসহ নানাবিধ জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় ওই চার নেতাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারী, সলিমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। রাত নয়টার দিকে ভাটিয়ারী রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনের ওপর কাঠের স্লিপার তুলে আগুন ধরিয়ে দেন। ফলে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।  এই সময় তাঁরা নানা রকম স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

রাত ১১টার দিকে আসলাম চৌধুরীর পক্ষে বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ থেকে ছেড়ে দেন।

ফলে দীর্ঘ চার ঘণ্টা আটকে থাকা যানবাহন ও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন গতকাল রাত সোয়া ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ার খবরে নেতা–কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে যে যাঁর মতো করে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করেন। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। যার কারণে আসলাম চৌধুরীর নিজেরও চট্টগ্রাম থেকে তাঁর নিজ বাড়িতে ফিরতে দেরি হয়। আসলাম চৌধুরী বাসায় ফিরে বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের কাছে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য বার্তা দেন। ফলে তিনি (মোরসালীন) নিজেই নেতা–কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ইউনিটে খবর দেন।

এরপর রাত ১১টার দিকে নেতা–কর্মীরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় জলিল টেক্সটাইল গেট এলাকায় বাদশা ফেয়ারল্যান্ড নামে একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলীয় একটি সভা হবে। সে সভায় সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হবে।

এদিকে  দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর গতকাল রাতে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অনুসারী নেতা–কর্মীরা বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছেন।

আজকের সভাটি দলীয় সভা নয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম-৪ আসনের বিএনপি'র মনোনয়ন পাওয়া কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বড় ভাই। 

গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল দলীয় কোনো সভা ডাকা হয়নি। মনোনয়ন বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় আরও ২-৩ দিন পর ডাকা হবে। তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরী ও দলকে পৃথক করা যাবে না। কিন্তু কেন তিনি মনোনয়ন পাননি, তা কেবল দলের হাইকমান্ড এবং আসলাম চৌধুরী জানেন। দলের হাইকমান্ড যা সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা মেনে আগামী নির্বাচনের সবাই মিলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ