আইনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এই মতাদর্শ ও এই নামে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। এটিই আমাদের শহীদদের প্রতি অঙ্গীকার।’

আজ সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘দ্য হিরোজ অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।

লড়াই এখনো শেষ হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরেরা নানা আস্ফালন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা বলতে চাই, জুলাই মাসকে ভুলে যাবেন না। জুলাইয়ের চেতনা শেষ হয়ে যায়নি। যদি বিন্দু পরিমাণ আস্ফালনের চেষ্টা করা হয়, আমরা দ্বিগুণ শক্তিতে প্রতিহত করব আপনাদের। জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি জায়গা এক একটি ইতিহাস বহন করে উল্লেখ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়। ফলে সব স্বৈরশাসকই সব সময় চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন করে রাখতে। স্বৈরশাসকের সময়ে বিগত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, ক্যাম্পাসে নির্যাতন, নিপীড়ন ও ভয়ের সংস্কৃতি চালুর মধ্য দিয়ে সবার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে যে পথ দেখিয়েছে, সেই পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সারা দেশের সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়াই করেছে। ১৭ জুলাই আমরা ভেবেছিলাম আমরা হেরে গেছি, হয়তো আমাদের সামনে আর পথ নেই, আমরা নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলাম, তখন আমরা শেষ আশা হিসেবে ১৮ তারিখের শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। সে সময় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে এসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।’

গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ জুলাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সেদিন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের বোনদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। সেদিনের ঘটনা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর্তনাদ দেখেছি ঢাকা মেডিকেলে। সেদিন বাংলাদেশের জনগণ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে। জনগণের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়বদ্ধতা, এটি আমরা সব সময় মনে রাখব।’

বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর শিক্ষকদের একটি অংশ নিজেদের ফ্যাসিবাদের দালাল হিসেবে নিজেদের প্রমাণে ব্যস্ত ছিল। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষক মেরুদণ্ড নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমরা সামনের দিকে এগোব ঠিকই কিন্তু আমরা পেছনের ঘটনা ভুলে যাব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৫-১৬ বছরে যে নির্যাতন হয়েছে, তার ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম, তখন দেখেছি যেকোনো আন্দোলন হলে সেখানে দমন হতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসবের বিচার নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেনি।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এই প্রক্টর অফিসে শিক্ষার্থীদের শত শত নিপীড়নের ঘটনার অভিযোগপত্র পাওয়া যাবে। কোনো অভিযোগের বিচার করা হয়নি। ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। এনআরসিসি নিয়ে আমরা একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম সেই প্রোগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন আমাকে আক্রমণ করেছিল। সেই হামলার বিচার চাইতে আমরা কয়েকজন উপাচার্যের কাছে গেলে গেট থেকে বলা হয়, উপাচার্য স্যার নামাজ শেষ করে আমাদের সাথে দেখা করবে। আমাদের সেখানে অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম, দুই দিক থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী লাঠি নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। অর্থাৎ ভিসি স্যার আমাদের দাঁড়াতে বলে নিজে ফোন করে সন্ত্রাসীদের এনেছে। ভিসির বাসার সামনেই আমাদের আক্রমণ করা হয়।’

যাঁরা এসব নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, তার সঠিক তদন্ত ও বিচার করতে বর্তমান প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার সাহস না পায়, সে জন্য এটা করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম আম দ র স র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।

মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।

ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।

তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ