প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকছে। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলে তখন নীতি সুদহার কমানো হবে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশ এবং পরের জুনে ৫ শতাংশে নামতে পারে। গতকাল চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন আশার কথা জানান গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর। বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকাকে সাফল্য উল্লেখ করে শিগগিরই অস্থিতিশীলতার কোনো কারণ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মুদ্রানীতির ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। এ সময় অন্য তিন ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, জাকির হোসেন চৌধুরী ও ড. কবির আহমেদ এবং বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকারে গভর্নরের দায়িত্ব পান ড. আহসান এইচ মনসুর। এটি ছিল তাঁর প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা।

নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৯ দশমিক ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে একই লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা আগের মতোই ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি বর্তমান সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের আশপাশে থাকার আশা করা হয়েছে। রিজার্ভ দীর্ঘদিন ধরে ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল হওয়া এবং পরিশোধের চাপ কমায় বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। অবশ্য আগের লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র বের হওয়ায় তা ৩০ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, যে কোনো নীতি কাজ করতে একটা সময় দিতে হয়। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে, যা 

নীতি সুদহারের তুলনায় কম। এটি ইতিবাচক। তবে আগামী মাসে আবার এই মূল্যস্ফীতি বাড়তে বা কমতে পারে। তার মানে নীতি কাজ করছে না, তেমন না। তবে আগামী জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের নিচে নামানো আমাদের একটা লক্ষ্য। ২০২৬ সালের জুনে এটি ৫ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশা করি। একটা ইতিবাচক বিষয় হলো, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভারসাম্য একটা স্বস্তির জায়গায় এসেছে। চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল আছে। সামগ্রিক হিসাব ইতিবাচক হয়ে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল প্রবৃদ্ধি অর্জনের বছর না। এ সময়ে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি তেমন হবে না, এটাই বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা একটা কারণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের অর্থনীতিকে তুলনা করা অমূলক। কেননা, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক; খাবার পাওয়া যায়নি, পেট্রোলের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়েছে। আমাদের এখানে এর কিছুই ঘটেনি।

বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা নেই
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সবার আগে দরকার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা সফল হয়েছে। শিগগিরই অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কা নেই। এর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, রমজানে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য এরই মধ্যে আমদানি হয়ে গেছে। বোরো মৌসুমের প্রয়োজনীয় সারের বেশির ভাগই চলে এসেছে। হজের বাড়ি ভাড়াসহ বড় ধরনের খরচ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বকেয়ার বেশির ভাগই পরিশোধ করা হয়েছে। আবার রমজান ও কোরবানি ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স বাড়বে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। এখন চিন্তা কেবল বিদ্যুৎ-জ্বালানির পরিশোধ নিয়ে। তবে রেমিট্যান্সে ২৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি আছে। রপ্তানিতে আছে ১৩ শতাংশের মতো। শেষ পর্যন্ত দুয়ে মিলে যদি ১২ বিলিয়ন ডলার বা এর বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তাতেও বিনিময় হারে কোনো চাপ তৈরি হবে না।
তিনি বলেন, এই সরকার আসার পর আইএমএফের ঋণের কোনো কিস্তি না পেয়েও রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ডলারের দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২২ টাকার একটি করিডোর ঠিক করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ও বিকেল এটি তদারকি করা হচ্ছে। এ নিয়ে কথা থাকতে পারে। তাই বলে তো বিদেশি বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর হাতে এটি তুলে দেওয়া হবে না। তারাই ডলারের যে দর বলবে, সেটাই ডলারের দর হতে পারে না; বরং আমরা যেটা বলব, সেটি হবে দর।

বড় কোন গ্রুপ কত টাকার ঋণ নিয়েছে, তারাই হয়তো জানে না
ব্যাংক লুট, কর ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়া ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিষয়ে ১১টি যৌথ তদন্ত দল কাজ করছে। এসব তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, দেশি-বিদেশি সম্পদ অ্যাটাচ করার কাজ শুরু হয়েছে। এখনও কে কত টাকার ঋণ নিয়েছে, তা জানা যায়নি। এরাই হয়তো জানে না, কে কত টাকার ঋণ নিয়েছে। তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের লন্ডনে সাড়ে তিনশ বাড়ি আছে। সে নিজেও বলতে পারবে না, কোন ঠিকানায় কোন বাড়ি কিনেছে। তবে সব তথ্যই বের করা হবে। পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হয়তো সময় লাগবে। প্রথমে তাদের দেশের সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগে কোনো পরিদর্শন হয়েছে কিনা, দেখা হবে। আবার যেসব অডিট ফার্ম এসব ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে, তাদের কী দায়দায়িত্ব ছিল তা-ও দেখা হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক– দুই পক্ষেরই। তবে প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে পর্যালোচনা হচ্ছে
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের জন্য পর্যালোচনা হচ্ছে। কোথায় কী সংশোধন দরকার, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন, পরিচালকদের মেয়াদ কমানো উচিত। আবার পরিচালক সংখ্যার অন্তত অর্ধেক স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হবে। এই স্বাধীন পরিচালক মামু-খালুকে নিয়োগ দেওয়া যাবে, তেমন না; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্যানেল থেকে নিয়োগ দিতে হবে। আবার ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার জন্য ২ শতাংশ শেয়ারের বাধ্যবাধকতা দরকার আছে কিনা, এসব দেখা হবে।

তারল্য সংকট দেখা দিলে আরও সহায়তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
গভর্নর বলেন, তারল্য সংকটে ছিল– এ রকম কয়েকটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার দিয়েছে। প্রয়োজনে এসব ব্যাংককে আরও ধার দেওয়া হবে। তাই বলে কোনো ব্যাংক থেকে যেন ক্ষুদ্র আমানতকারী খালি হাতে না ফেরে, সেটি দেখা হবে। ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা এরই মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। তাদের আর তারল্য দিতে হবে না। তাই বলে যে আগের মতো শক্তিশালী অবস্থায় চলে গেছে, তেমন না। এ জন্য হয়তো তিন-চার বছর সময় লাগবে। বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে সুদৃঢ় অবস্থানে নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তা করা হবে।
গভর্নর জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এরই মধ্যে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। এতে করে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগানে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে।

আগের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক ছিল না
ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আগের মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ছিল না। এখন প্রকৃতপক্ষেই সংকোচনমূলক হয়েছে। যে কারণে অনেক দিন পর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি রেপো সুদহারের নিচে নেমেছে। এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে কোনো ঋণ দিচ্ছে না; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হবে। এ জন্য আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একটা ইতিবাচক বিষয় হলো বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা রয়েছে। সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমলে অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য পর শ ধ র বল ন দশম ক প রথম বছর র অবস থ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ