প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে জোর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে
Published: 11th, February 2025 GMT
প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকছে। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলে তখন নীতি সুদহার কমানো হবে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশ এবং পরের জুনে ৫ শতাংশে নামতে পারে। গতকাল চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন আশার কথা জানান গভর্নর ড.
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মুদ্রানীতির ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। এ সময় অন্য তিন ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, জাকির হোসেন চৌধুরী ও ড. কবির আহমেদ এবং বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকারে গভর্নরের দায়িত্ব পান ড. আহসান এইচ মনসুর। এটি ছিল তাঁর প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা।
নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৯ দশমিক ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে একই লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা আগের মতোই ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি বর্তমান সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের আশপাশে থাকার আশা করা হয়েছে। রিজার্ভ দীর্ঘদিন ধরে ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল হওয়া এবং পরিশোধের চাপ কমায় বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। অবশ্য আগের লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র বের হওয়ায় তা ৩০ শতাংশ ছাড়াতে পারে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, যে কোনো নীতি কাজ করতে একটা সময় দিতে হয়। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে, যা
নীতি সুদহারের তুলনায় কম। এটি ইতিবাচক। তবে আগামী মাসে আবার এই মূল্যস্ফীতি বাড়তে বা কমতে পারে। তার মানে নীতি কাজ করছে না, তেমন না। তবে আগামী জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের নিচে নামানো আমাদের একটা লক্ষ্য। ২০২৬ সালের জুনে এটি ৫ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশা করি। একটা ইতিবাচক বিষয় হলো, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভারসাম্য একটা স্বস্তির জায়গায় এসেছে। চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল আছে। সামগ্রিক হিসাব ইতিবাচক হয়ে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল প্রবৃদ্ধি অর্জনের বছর না। এ সময়ে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি তেমন হবে না, এটাই বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা একটা কারণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের অর্থনীতিকে তুলনা করা অমূলক। কেননা, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক; খাবার পাওয়া যায়নি, পেট্রোলের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়েছে। আমাদের এখানে এর কিছুই ঘটেনি।
বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা নেই
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সবার আগে দরকার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা সফল হয়েছে। শিগগিরই অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কা নেই। এর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, রমজানে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য এরই মধ্যে আমদানি হয়ে গেছে। বোরো মৌসুমের প্রয়োজনীয় সারের বেশির ভাগই চলে এসেছে। হজের বাড়ি ভাড়াসহ বড় ধরনের খরচ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বকেয়ার বেশির ভাগই পরিশোধ করা হয়েছে। আবার রমজান ও কোরবানি ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স বাড়বে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। এখন চিন্তা কেবল বিদ্যুৎ-জ্বালানির পরিশোধ নিয়ে। তবে রেমিট্যান্সে ২৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি আছে। রপ্তানিতে আছে ১৩ শতাংশের মতো। শেষ পর্যন্ত দুয়ে মিলে যদি ১২ বিলিয়ন ডলার বা এর বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তাতেও বিনিময় হারে কোনো চাপ তৈরি হবে না।
তিনি বলেন, এই সরকার আসার পর আইএমএফের ঋণের কোনো কিস্তি না পেয়েও রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ডলারের দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২২ টাকার একটি করিডোর ঠিক করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ও বিকেল এটি তদারকি করা হচ্ছে। এ নিয়ে কথা থাকতে পারে। তাই বলে তো বিদেশি বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর হাতে এটি তুলে দেওয়া হবে না। তারাই ডলারের যে দর বলবে, সেটাই ডলারের দর হতে পারে না; বরং আমরা যেটা বলব, সেটি হবে দর।
বড় কোন গ্রুপ কত টাকার ঋণ নিয়েছে, তারাই হয়তো জানে না
ব্যাংক লুট, কর ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়া ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিষয়ে ১১টি যৌথ তদন্ত দল কাজ করছে। এসব তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, দেশি-বিদেশি সম্পদ অ্যাটাচ করার কাজ শুরু হয়েছে। এখনও কে কত টাকার ঋণ নিয়েছে, তা জানা যায়নি। এরাই হয়তো জানে না, কে কত টাকার ঋণ নিয়েছে। তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের লন্ডনে সাড়ে তিনশ বাড়ি আছে। সে নিজেও বলতে পারবে না, কোন ঠিকানায় কোন বাড়ি কিনেছে। তবে সব তথ্যই বের করা হবে। পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হয়তো সময় লাগবে। প্রথমে তাদের দেশের সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগে কোনো পরিদর্শন হয়েছে কিনা, দেখা হবে। আবার যেসব অডিট ফার্ম এসব ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে, তাদের কী দায়দায়িত্ব ছিল তা-ও দেখা হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক– দুই পক্ষেরই। তবে প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে পর্যালোচনা হচ্ছে
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের জন্য পর্যালোচনা হচ্ছে। কোথায় কী সংশোধন দরকার, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন, পরিচালকদের মেয়াদ কমানো উচিত। আবার পরিচালক সংখ্যার অন্তত অর্ধেক স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হবে। এই স্বাধীন পরিচালক মামু-খালুকে নিয়োগ দেওয়া যাবে, তেমন না; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্যানেল থেকে নিয়োগ দিতে হবে। আবার ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার জন্য ২ শতাংশ শেয়ারের বাধ্যবাধকতা দরকার আছে কিনা, এসব দেখা হবে।
তারল্য সংকট দেখা দিলে আরও সহায়তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
গভর্নর বলেন, তারল্য সংকটে ছিল– এ রকম কয়েকটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার দিয়েছে। প্রয়োজনে এসব ব্যাংককে আরও ধার দেওয়া হবে। তাই বলে কোনো ব্যাংক থেকে যেন ক্ষুদ্র আমানতকারী খালি হাতে না ফেরে, সেটি দেখা হবে। ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা এরই মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। তাদের আর তারল্য দিতে হবে না। তাই বলে যে আগের মতো শক্তিশালী অবস্থায় চলে গেছে, তেমন না। এ জন্য হয়তো তিন-চার বছর সময় লাগবে। বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে সুদৃঢ় অবস্থানে নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তা করা হবে।
গভর্নর জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এরই মধ্যে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। এতে করে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগানে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে।
আগের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক ছিল না
ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আগের মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ছিল না। এখন প্রকৃতপক্ষেই সংকোচনমূলক হয়েছে। যে কারণে অনেক দিন পর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি রেপো সুদহারের নিচে নেমেছে। এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে কোনো ঋণ দিচ্ছে না; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হবে। এ জন্য আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একটা ইতিবাচক বিষয় হলো বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা রয়েছে। সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমলে অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য পর শ ধ র বল ন দশম ক প রথম বছর র অবস থ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫