যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশ বেশ কিছু আইনি চ্যালেঞ্জের ও অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

প্রায় ১৬০ বছর ধরে মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী এমন নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে যে দেশটিতে জন্ম নেওয়া যে কেউই একজন মার্কিন নাগরিক হবেন।

কিন্তু ট্রাম্প অবৈধভাবে বা অস্থায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্বের অধিকার অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর নীতির অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর এ পদক্ষেপে জনসমর্থন আছে বলেও মনে হচ্ছে। এমারসন কলেজের একটি জরিপে দেখা গেছে, এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিরোধিতার পরিবর্তে অনেক বেশি মার্কিন নাগরিক তাঁর পক্ষে আছেন।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলসংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডেমোক্র্যাট–শাসিত অঙ্গরাজ্য ও শহর, নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিবিশেষে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করেন।বিশ্বজুড়ে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বা ‘জাস সোলি’ (মাটির অধিকার) বিশ্বব্যাপী খুব বেশি প্রচলিত রীতি নয়।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের মধ্যে একটি, যারা নিজ দেশে জন্ম নেওয়া যে কাউকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব দেয়। এসব দেশের বেশির ভাগই আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত।

এ নিয়মের বিপরীতে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার কিছু অংশের অনেক দেশই ‘জাস সাঙ্গুইনিস’ বা রক্তের অধিকার নীতি মেনে চলে। এ নীতির মূল বক্তব্য হলো—জন্ম যেখানেই হোক না কেন, শিশুরা তাদের মা–বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে নাগরিকত্ব লাভ করবে।

আবার কোনো কোনো দেশে এ উভয় নীতির সমন্বয়ও দেখা যায়। স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার নিয়মও দেখা যায় এসব দেশে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক জন স্ক্রেন্টনি বিশ্বাস করেন, আমেরিকা মহাদেশজুড়ে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বা জাস সোলি প্রচলিত থাকলেও এ ক্ষেত্রে প্রতিটি জাতি-রাষ্ট্র স্বতন্ত্র কারণে এ রীতি গ্রহণ করেছিল।

আমেরিকা মহাদেশজুড়ে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বা ‘জাস সোলি’ প্রচলিত থাকলেও এ ক্ষেত্রে প্রতিটি জাতি-রাষ্ট্র স্বতন্ত্র কারণে এ নীতি গ্রহণ করেছিল।জন স্ক্রেন্টনি, যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

জন স্ক্রেন্টনির মতে, কিছু দেশ দাস ও সাবেক দাসদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নীতি গ্রহণ করেছিল। কিছু দেশ একেবারেই ভিন্ন কারণে এ রীতি গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্বের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষদের আইনি স্বীকৃতি দিতে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল।

তবে স্ক্রেন্টনি যুক্তি দেন যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রায় সব দেশের মধ্যে একটি মিল পাওয়া যায়। আর তা হলো, ‘সাবেক উপনিবেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে নিজেদের একটি জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক স্ক্রেটনি বলেন, ‘কাকে নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, কাকে বাদ দিতে হবে ও কীভাবে জাতি-রাষ্ট্রকে শাসনযোগ্য করে তুলতে হবে, সেসব সম্পর্কে দেশগুলোকে কৌশলী হতে হয়েছিল। অনেক দেশ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান তৈরি করেছিল।’

জন স্ক্রেন্টনি আরও বলেন, কোনো কোনো দেশ ইউরোপ থেকে অভিবাসনকে উৎসাহিত করতে নাগরিকত্বের বিধান রেখেছিল। আবার কোনো কোনো দেশ নিশ্চিত করেছিল যে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সাবেক দাস ও তাঁদের সন্তানদের পূর্ণ সদস্য (নাগরিক) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তাঁদের রাষ্ট্রহীন রাখা হবে না। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কৌশল ছিল। সেই সময়টি হয়তো চলে গেছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলসহ বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ