ফলের শাঁস যেন মধুমাখা ডিমের কুসুম
Published: 12th, February 2025 GMT
আকারটা সফেদার মতো। পাকলে ঘন হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ভেতরের শাঁসটা পরিচিত কোনো ফলের মতো নয়। একেবারেই আলাদা এর স্বাদ। গাঢ় হলুদ শাঁস মুখে দিলে মনে হবে ডিমের কুসুমের সঙ্গে কেউ ক্রিম আর মধু মিশিয়ে দিয়েছে। মুখে লেগে থাকবে অনেকক্ষণ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় ফলের ভান্ডারে যোগ হওয়া নতুন এই ফলের নাম বারি টিসা-১। টিসা ফল নামেই আপাতত একে ডাকা হচ্ছে। পাঁচ বছর গবেষণা করে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকেরা ফলিয়েছেন আমেরিকা মহাদেশের মেক্সিকোর এই ফল।
আগামী এক বছরের মধ্যে কৃষকদের কাছে ফলটি পৌঁছে দেওয়া সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার স্থানীয় এ ফল বাংলাদেশের বাজারে সাড়া জাগাবে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে আমেরিকা ও মেক্সিকো থেকে ৪ জাতের টিসা ফলের চারা পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একটি প্রজাতি দেখতে ডিমের মতো, অন্যটি অনেকটা সফেদা ফলের মতো। বাকি দুটি কিছুটা লম্বা আকারের। ডিম আকারের জাতটিতে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী গাছে একবারে ৪০০ থেকে ৫০০টি ফল ধরে। প্রতিবছর ফলন দেয়। আকারের কারণে একে এগফ্রুট নামেও ডাকা হয়। এ জাতটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সম্ভাবনাময় বলে মনে করছেন গবেষকেরা। আবার এ ফল দিয়ে কেক, পুডিং, আইসক্রিম, জুস ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
গবেষকেরা জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া, মাটি, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত টিসা ফল চাষের জন্য উপযোগী। বিশেষ করে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অধিক ফলন পাওয়া যায়। ফলের ওজন গড়ে ১৭০ থেকে ১৯৫ গ্রাম। প্রতি গাছে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি ফল ধরে। গাছের বয়স ভেদে ফলনের তারতম্য ঘটে। পরিপক্ব ফলের রং ডিমের কুসুমের মতো হলুদ হয়। বংশবিস্তারের জন্য বীজ থেকে টিসা ফলের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাফটিং বা কলমের মাধ্যমেও চারা উৎপাদন করা যায়। ফলটি ভিটামিন- এ, সি, মিনারেল (ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম) সমৃদ্ধ।
পাকা টিসা ফলের ভেতরটা দেখতে একেবারে ডিমের কুসুমের মতো। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক
একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।
যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষকচৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।
যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।
তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।
দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী