কুষ্টিয়ায় তরুণকে হত্যাকাণ্ডের জেরে ৪৬টি মহিষ লুটের অভিযোগ
Published: 12th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে এক তরুণকে হত্যার ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষের মহিষের বাথান থেকে ৪৬টি মহিষ লুট করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন মহিষগুলো লুট করেন বলে অভিযোগ।
লুট হওয়া মহিষের মালিক সাইদ মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাতে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া পদ্মার চরে তাঁদের বাথান থেকে রাখালদের মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪৬টি মহিষ লুট করে নিয়ে যান সাইদুর রহমান ও তাঁর লোকজন। এ সময় তাঁরা মহিষের রাখাল মাজদার আলী (৫০), কামাল হোসেন (৩৫) ও সৈকতকে (৩৫) বেধড়ক মারধর করে ও অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে পাশের রহিমপুর মাঠে নিয়ে আটকে রাখে।
বাথানের মহিষসহ রাখালদের অপহরণের খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাখালদের উদ্ধার করে। তবে লুট হওয়া ৪৬টি মহিষ উদ্ধার করতে পারেনি। মহিষগুলো লুট করার পরপরই ট্রাকভর্তি করে অন্যত্র পাচার ও বিক্রয় করে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া ঘাটের নিচে পদ্মার চরে রাজু (১৮) নামের এক তরুণকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত রাজু একই ইউনিয়নের বৈরাগীরচর ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম প্রামাণিকের ছেলে। এ ঘটনার পর চরে সাইদ মণ্ডলের বাথান বাড়িতে হামলা করে বাথানের ৪৬টি মহিষ লুট করা হয়।
লুট হওয়া ৪৬টি মহিষের দাম ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা উল্লেখ করে কুষ্টিয়া সেনা ক্যাম্প, পুলিশ সুপার ও র্যাবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন মহিষের মালিক সাইদ মণ্ডলের স্ত্রী তমা খাতুন। অভিযোগে মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সাইদুর রহমানের নাম উল্লেখ করে আরও ১৩ জনের নাম দেওয়া হয়েছে।
তবে মহিষ লুটের অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির নেতা সাইদুর রহমান বলেন, তিনি মঙ্গলবার নিহতের তরুণের ময়নাতদন্তসহ লাশ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত ছিলেন। এলাকার খারাপ লোক এমন কাজ করেছে কি না, তাঁর জানা নেই।
মহিষ লুটের অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ট কর
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।