লিলিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করার দায়ে অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা
Published: 12th, February 2025 GMT
দেশীয় কসমেটিকস বা প্রসাধনী, হোমকেয়ার ও স্কিনকেয়ার বা ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যানের লিলি ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে একটি অসাধু চক্র ধরা পড়েছে। দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরিচালিত মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত এই চক্রকে জরিমানা ও তা অনাদায়ে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, লিলিসহ অন্য কিছু ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে বাজারজাত করার খবর পেয়ে বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবেকুন নাহারের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার দনিয়ায় মাদ্রাসা রোডের মায়ের দোয়া কনজ্যুমার ইন্ডাস্ট্রিজে অভিযান চালায়। এ সময় বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা লিলির পাশাপাশি অন্য কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যও উদ্ধার করেন।
বিএসটিআই জানায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী দল বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাইলে মায়ের দোয়া কনজ্যুমার ইন্ডাস্ট্রিজ তা দেখাতে পারেনি। তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সে জন্য অসাধু ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অবৈধভাবে পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার অপরাধে এ শাস্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া অবৈধ মালামাল জব্দ ও ধ্বংস করেন বিএসটিআইয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, নকল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন রোধে এ ধরনের অভিযান জোরদার করা হবে।
এদিকে নকল পণ্য উৎপাদনকারীকে শাস্তি দেওয়ায় বিএসটিআইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন লিলি ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনকারী রিমার্ক-হারল্যানের পরিচালক চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘জনগণকে অথেন্টিক পণ্য পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। কিছু অসাধু চক্র মানহীন ভেজাল পণ্য বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করেছিল। বিএসটিআই তা রুখে দিয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।