গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউবা চাকরিজীবী। দিনের বেলা যে যাঁর মতো কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পর একত্র হচ্ছেন। রাত ৮টার পর শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তাঁদের মাটি কেটে সড়ক তৈরির কাজ। এভাবেই প্রায় দুই মাস পরিশ্রম করে বানিয়েছেন প্রায় ৬০০ মিটার কাঁচা সড়ক।

সড়কের জন্য ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ করেছেন এলাকার লোকজন। এ ঘটনা পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকার। আর অল্প কিছু কাজ করলেই সম্পূর্ণ হবে সড়কটি। এই সড়কের মাঝের এক জায়গায় ফাঁকা রেখেছেন তাঁরা। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি সেতু নির্মাণের দাবি তাঁদের।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকায় স্থানীয় উদ্যোগে প্রায় ৬০০ মিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। রাত আটটার পর শুরু হতো গ্রামবাসীর মাটি কেটে সড়ক তৈরির কাজ। এতে অংশ নিতেন প্রায় ১০০ জন। গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ চাল, কেউ ডাল, কেউ আলুসহ বিভিন্ন উপকণের খরচ দিতেন। মাঝেমধ্যেই রান্না করা হতো খিচুড়ি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দুই পাশে সবুজ খেতের মাঝে তৈরি হয়েছে নতুন কাঁচা সড়ক। গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া ও ডাঙ্গাবাড়ি গ্রাম দুটিকে যুক্ত করেছে নতুন সড়কটি। স্বাচ্ছন্দে চলাচল করছে শিক্ষার্থীসহ এলাকার নানা বয়সী মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোল্লাপাড়া থেকে ডাঙ্গাবাড়ি যাওয়ার সরু আলপথটি ব্রিটিশ আমলের সরকারি রেকর্ডের সড়ক। তবে সড়কটি কোনো দিন হয়নি সংস্কার; ফসলি জমিতে মিশে গেছে। চিহ্ন হিসেবে ছিল একটি আলপথ। শুষ্ক মৌসুমের সেই আলপথ ধরে স্থানীয় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ চলাচল করেন। তবে বর্ষাকালে তাঁদের সেই পথে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। কখনো কলাগাছের ভেলা তৈরি করে, আবার কখনো হাঁটুপানিতে মাড়িয়ে যেতে হয় গন্তব্যে। জেলা শহরে যাতায়াতে বা অন্য কোনো গন্তব্যে যেতে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হতো।

সড়কটি সংস্কার বা নতুন করে তৈরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার ঘুরেও কোনো সমাধান পাননি গ্রামবাসী। অবশেষে নিজেদের ভোগান্তি নিরসনে উদ্যোগ নেন মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। গত ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে সিদ্ধান্ত নেন নিজেরা মাটি কেটেই বানাবেন সড়ক। গ্রামের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জড়ো হন সড়ক নির্মাণের সেই স্থানে। প্রতিদিন রাত আটটার পর শুরু হয় তাঁদের মাটি কেটে সড়ক তৈরির কাজ। এতে অংশ নিতেন গ্রামের কিশোর, তরুণ, যুবক ও বয়স্করা মিলে প্রায় ১০০ জন। গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ চাল, কেউ ডাল, কেউ আলুসহ বিভিন্ন উপকণের খরচ দিতেন। মাঝেমধ্যেই রান্না করা হতো খিচুড়ি। সাউন্ড বক্সে বাজানো হতো গান। আনন্দের সঙ্গে তাঁরা কাজ করেন। গানের তালে তালে কেউ কোদালের কোপে মাটি কাটতেন আবার কেউ ডালিতে নিয়ে মাটি ফেলতেন জমির আলে। এভাবেই দুই মাসে মাসে প্রায় ৬০০ মিটার সড়ক তৈরির বেশির ভাগ কাজই সম্পন্ন করেছেন তাঁরা।

মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বালুশ্রমিক তফিজুল ইসলাম (৪৮) বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন এই সড়কের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু কেউ রাস্তা করে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি। পরে গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো রাতে মাটি কেটে রাস্তা (সড়ক) বানাবেন। তিনি দিনে নদীতে বালু তোলার কাজ করেন। আর রাতে এখানে এসে রাস্তার জন্য সবার সঙ্গে মাটি কাটার কাজ করেন।

মো.

রাজু (৪২) নামের একজন মুদিদোকানদার বলেন, ‘এই রাস্তাটা না থাকায় আমাদের খুবই কষ্ট ছিল। বর্ষার সময় অনেকটা পথ ঘুরে বাচ্চাদের স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে হতো। গ্রামের প্রায় ১০০ জন মিলে রাতে মাটি কেটে রাস্তাটা বানিয়েছি। কিন্তু এখানে একটা ব্রিজ (সেতু) না হলে আমাদের এই কষ্টটা বিফলে যাবে।’  

সড়কের মাঝে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে কালভার্ট নির্মাণের জন্য

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক ন র ম ণ গ র মব স র সড়ক ত র র এল ক র র জন য পর শ র ক জ কর সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান