বারবার ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি, স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ গ্রামবাসীর
Published: 15th, February 2025 GMT
গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউবা চাকরিজীবী। দিনের বেলা যে যাঁর মতো কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পর একত্র হচ্ছেন। রাত ৮টার পর শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তাঁদের মাটি কেটে সড়ক তৈরির কাজ। এভাবেই প্রায় দুই মাস পরিশ্রম করে বানিয়েছেন প্রায় ৬০০ মিটার কাঁচা সড়ক।
সড়কের জন্য ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ করেছেন এলাকার লোকজন। এ ঘটনা পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকার। আর অল্প কিছু কাজ করলেই সম্পূর্ণ হবে সড়কটি। এই সড়কের মাঝের এক জায়গায় ফাঁকা রেখেছেন তাঁরা। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি সেতু নির্মাণের দাবি তাঁদের।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকায় স্থানীয় উদ্যোগে প্রায় ৬০০ মিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। রাত আটটার পর শুরু হতো গ্রামবাসীর মাটি কেটে সড়ক তৈরির কাজ। এতে অংশ নিতেন প্রায় ১০০ জন। গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ চাল, কেউ ডাল, কেউ আলুসহ বিভিন্ন উপকণের খরচ দিতেন। মাঝেমধ্যেই রান্না করা হতো খিচুড়ি।সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দুই পাশে সবুজ খেতের মাঝে তৈরি হয়েছে নতুন কাঁচা সড়ক। গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া ও ডাঙ্গাবাড়ি গ্রাম দুটিকে যুক্ত করেছে নতুন সড়কটি। স্বাচ্ছন্দে চলাচল করছে শিক্ষার্থীসহ এলাকার নানা বয়সী মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোল্লাপাড়া থেকে ডাঙ্গাবাড়ি যাওয়ার সরু আলপথটি ব্রিটিশ আমলের সরকারি রেকর্ডের সড়ক। তবে সড়কটি কোনো দিন হয়নি সংস্কার; ফসলি জমিতে মিশে গেছে। চিহ্ন হিসেবে ছিল একটি আলপথ। শুষ্ক মৌসুমের সেই আলপথ ধরে স্থানীয় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ চলাচল করেন। তবে বর্ষাকালে তাঁদের সেই পথে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। কখনো কলাগাছের ভেলা তৈরি করে, আবার কখনো হাঁটুপানিতে মাড়িয়ে যেতে হয় গন্তব্যে। জেলা শহরে যাতায়াতে বা অন্য কোনো গন্তব্যে যেতে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হতো।
সড়কটি সংস্কার বা নতুন করে তৈরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার ঘুরেও কোনো সমাধান পাননি গ্রামবাসী। অবশেষে নিজেদের ভোগান্তি নিরসনে উদ্যোগ নেন মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। গত ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে সিদ্ধান্ত নেন নিজেরা মাটি কেটেই বানাবেন সড়ক। গ্রামের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জড়ো হন সড়ক নির্মাণের সেই স্থানে। প্রতিদিন রাত আটটার পর শুরু হয় তাঁদের মাটি কেটে সড়ক তৈরির কাজ। এতে অংশ নিতেন গ্রামের কিশোর, তরুণ, যুবক ও বয়স্করা মিলে প্রায় ১০০ জন। গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ চাল, কেউ ডাল, কেউ আলুসহ বিভিন্ন উপকণের খরচ দিতেন। মাঝেমধ্যেই রান্না করা হতো খিচুড়ি। সাউন্ড বক্সে বাজানো হতো গান। আনন্দের সঙ্গে তাঁরা কাজ করেন। গানের তালে তালে কেউ কোদালের কোপে মাটি কাটতেন আবার কেউ ডালিতে নিয়ে মাটি ফেলতেন জমির আলে। এভাবেই দুই মাসে মাসে প্রায় ৬০০ মিটার সড়ক তৈরির বেশির ভাগ কাজই সম্পন্ন করেছেন তাঁরা।
মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বালুশ্রমিক তফিজুল ইসলাম (৪৮) বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন এই সড়কের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু কেউ রাস্তা করে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি। পরে গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো রাতে মাটি কেটে রাস্তা (সড়ক) বানাবেন। তিনি দিনে নদীতে বালু তোলার কাজ করেন। আর রাতে এখানে এসে রাস্তার জন্য সবার সঙ্গে মাটি কাটার কাজ করেন।
মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক ন র ম ণ গ র মব স র সড়ক ত র র এল ক র র জন য পর শ র ক জ কর সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
তফসিল বাতিলের দাবিতে মাদারীপুরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিলের দাবিতে মাদারীপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। মহাসড়কটির একাধিক স্থানে গাছ ফেলে রাখায় ভোর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী, চালক ও পরিবহনশ্রমিকেরা।
আজ শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার সমাদ্দার থেকে মস্তফাপুর বড় ব্রিজের মধ্যবর্তী তিনটি স্থানে মহাসড়কটির ওপর গাছ ফেলে অবরোধ করা হয়। এ সময় মুখে মাস্ক পরে মোটরসাইকেল শোডাউন ও বিক্ষোভ মিছিলও করেন কয়েকজন।
পুলিশ বলছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিলের দাবিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি হিসেবে পলাতক নেতা-কর্মীরা এ কর্মসূচি পালনের করার চেষ্টা করেছেন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সমাদ্দার, কলাবাড়ি এবং ঘটকচর ও মস্তফাপুর বড় ব্রিজের মধ্যবর্তী এলাকায় অন্তত তিন স্থানে আট–নয়টি গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যানজটে দিনের প্রথম প্রহরেই দূরদূরান্তের যাত্রী ও চালকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সড়ক থেকে গাছগুলো অপসারণ করা হয়। এরপর সকাল সাতটার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে ফেলা হলেও স্থানীয় লোকজন সেগুলো সরিয়ে দেয়