জৌলুশ নেই কটিয়াদীর ৪০০ বছরের ‘কুড়িখাই’ মেলার
Published: 16th, February 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কুড়িখাই মেলার ঐতিহ্য ৪০০ বছরের। এই ঐতিহ্য মেলার প্রচলিত সংস্কৃতি, লোকসমাগম ও বেচাকেনার দিক দিয়ে। এবার মেলায় লোকসমাগম অনেকটা কমে গেছে। কমেছে কেনাবেচাও। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুরালয়ে যাওয়া এবং ওই মাছ দিয়ে একসঙ্গে ভূরিভোজে মিলিত হওয়া মেলার মূল ঐতিহ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন এই ঐতিহ্যে হারিয়ে যাচ্ছে।
আয়োজকদের ধারণা, দেশের চলমান পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব মেলায় পড়েছে। ফলে গেল বছরগুলোর তুলনায় এবার লোকসমাগম তুলনামূলক কম হয়েছে, বিক্রি কমেছে। সেই সঙ্গে জামাই নিমন্ত্রণের রীতিতে ভাটা পড়ার কারণ মাছের আকাশচুম্বী দাম।
তারেকুর রহমান চাকরি করেন ঢাকায়। শ্বশুরবাড়ি কটিয়াদীর আচমিতা গ্রামে। মেলা উপলক্ষে ২০ বছর ধরে তিনি শ্বশুরবাড়ির নিমন্ত্রণ রক্ষা করে এসেছেন। এবার তিনি গত বৃহস্পতিবার মেলা থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ২২ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ কেনেন। তারেকুর রহমান বলেন, মাছের অনেক দাম। এত দাম দিয়ে মাছ কিনে রীতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শুধু এই কারণে মেলায় জামাইদের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িখাই মাজার লাগোয়া স্থানে ১৬ একর জায়গাজুড়ে দোকানপাট বসেছে। বিন্নিখই থেকে কারু, হস্ত, ইলেকট্রনিক, আসবাবসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৩০০ দোকান রয়েছে। শিশুদের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকিসহ রয়েছে ‘মৃত্যুকূপ’ খেলা দেখার ব্যবস্থা। এক পাশে বসেছে মাছের হাট। হাটে বড় মাছের সমাহার। কেউ কিনছেন বোয়াল, রুই, আইড়, চিতল কিংবা কালবাউশ মাছ। এবার মেলা বসেছে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। শেষ হবে আজ রোববার। নির্ধারিত দিনে মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয় না। চলে আরও কয়েকদিন।
মেলায় এবার আগের বছরের চেয়ে দোকান কিছুটা কম। ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার সবকিছুর দাম বেশি। বিশেষ করে মাছের। এবার তাজা মাছ খুব বেশি ওঠেনি। আবার দাম বেশি। এ কারণে ক্রেতারা দিন দিন মাছ কেনা থেকে দূরে থাকছেন।
কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আওয়াল মিয়া প্রায় ৫০ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করেন। গত মঙ্গলবার রাতে প্রায় ২৫ কেজি ওজনের দুটি বোয়াল মাছ আর ৩০ কেজি ওজনের একটি কাতল বিক্রির জন্য ক্রেতা আকর্ষণে হাঁকডাক করছিলেন। অধিক দামের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য হলো, প্রথমত মেলা সাত দিনের। সাত দিনের মেলার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বসতে হয়। আবার লোকসমাগম কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। খরচ উঠিয়ে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হজরত শাহজালাল (রহ.
মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। বিশেষ করে হাওরের মাছ। মেলা চলাকালে আশপাশের ৪০ গ্রামের জামাইরা শ্বশুরবাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ পাবেন, এটিও রীতি। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে জামাইরা তবেই শ্বশুরালয়ে হাজির হবেন এবং ওই মাছ দিয়ে সবাই একসঙ্গে ভূরিভোজ করবেন।
কটিয়াদীর ইউএনও মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, এবার মেলার ইজারা দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেলা শেষ হতে চলেছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।
ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।
আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।