চট্টগ্রামে যুবলীগ-ছাত্রলীগের আরো ৩৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
Published: 17th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার বিকেলে নগর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে ইউপি সদস্যকে মারধর করল যুবদল-ছাত্রদল
কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা, ওসি প্রত্যাহার
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগ নেত্রী ও ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা লিমা (৪০), মো.
অন্য গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পাঁচলাইশ থানার মো. ফয়েজ সিকদার (২২), সৈয়দ মো. আশরাফুল হক সিফাত (২২), সৈয়দ মো. আসাদুল হক আসাদ (১৯), চান্দগাঁও থানার মো. মুরাদ মিয়া (৩৮), রতন মিয়া ওরফে আরজু (৪২), হালিশহর থানার মো. রাজ্জাক আশরাফি ওরফে প্রকাশ রাজ (৩২), ডবলমুরিং থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক মো. গোলাম শরিফ তুষার (৩৪), মো. তোফাজ্জল হোসেন (৩৯), মো. ইমরান (৩২), মো. শফিউল আলম (৪৯), ইফরাত নুর, মো. খোকন (৩৯), প্রিয়া মনি (১৯), বন্দর থানার মো. নয়ন (৩০), খুলশী থানা যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. সুমন (৩৪), মো. আব্দুল মান্নান (৫৫), আকবরশাহ থানার নাজীম উদ্দিন (৩৪), ইপিজেড থানার শওকত ইসলাম (২৬), বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি বিপ্লব কুমার দাস ওরফে প্রকাশ মাটি (৩৭), পতেঙ্গা মডেল থানার মো. ওমর আলী (২৮) এবং কর্ণফুলী থানার আসামি ইসলামিয়া কলেজের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো. রাকিব।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিশেষ ক্ষমতা, সন্ত্রাসী বিরোধী ও পেনাল কোড আইনে এক বা একাধিক মামলা রয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উপন্যাসের জন্ম ও প্রধান চরিত্র দন কিহোতের মধ্যস্থতা
বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে। বিশেষ করে আখ্যানের প্রধান চরিত্র খ্যাপাটে দন কিহোতের উদ্ভট, হাস্যকর, অত্যাশ্চর্য ও রোমাঞ্চকর খেয়ালি কর্মকাণ্ডগুলো। সেরভানতেস তাঁর আখ্যানে ‘যুক্তিহীনের যুক্তি’ দিয়ে এমন এক জগৎ উন্মোচন করেন, যা শুধু বিস্ময়কর নয়, আধুনিক ও চিরকালীনও। উদ্ভবের পর থেকে যে জীবন মানুষ যাপন করে আসছে সেই অসহায়ত্ব, প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা, নিয়তির দুর্লঙ্ঘনীয় রহস্য, সম্পর্কের জটিলতা, বৈপরীত্য আর সীমাহীন নির্বোধতা প্রভৃতি নানা মাত্রিকতায় এতে হাজির হয়েছে। তাই সচেতন পাঠকমাত্রই দন কিহোতের দুনিয়ায় নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন, তিনি যে দেশের যে কালের হোন না কেন। এমন সৃষ্টি সেরভানতেসের পক্ষে সম্ভব হয় এই কারণে যে তাঁর কালটা ছিল একদিকে স্পেনের সমৃদ্ধি ও বুদ্ধিবৃত্তির স্বর্ণযুগ এবং অন্যদিকে কলহ, যুদ্ধ, আত্মম্ভরী ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের যুগও। জীবনাভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও নিজ জীবনের ট্র্যাজেডি থেকেও সারভানতেস জীবনকে এমন নির্মোহভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন—জীবন ও জগৎকে ঠাট্টা-রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, কাহিনি শেষে দন কিহোতের গভীর জীবনোপলব্ধি—একটা গভীর সত্যে পৌঁছানো। স্পেনের অপর বিখ্যাত লেখকেরা, যেমন নাট্যকার লোকে দে ভেগা, কবি ফ্রাই লুইস দে লেওন, কেভোদা প্রমুখ এমন সময় ও অভিজ্ঞতা ফুঁড়েই বেরিয়ে এসেছিলেন। এঁরা সবাই সম্মিলিতভাবে রেনেসাঁর আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবমনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। পুরোনো যুগের ভাঙন এবং নতুন যুগের আবির্ভাবে স্পেন তখন সত্যি দিশাহারা ছিল।
বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে।আখ্যানে দেখা যায়, মধ্যযুগের ইউরোপীয় নাইটদের নিয়ে লেখা শিভালরিক রোমান্স পড়ে নিজের ভেতর এক কাল্পনিক জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন লা মানচার গ্রামের জনৈক আলোনসো কিহানো। ফলে গরিব এই ভদ্রলোক নিজে নাইট হয়ে ওঠেন একদিন দন কিহোতে নাম নিয়ে। তাই কিহানোর হাড় জিরজিরে ঘোড়াটা হয়ে গেল ডাকসাইটে রোসিনান্তে, বাড়ির পুরোনো পোশাক পেল নাইটদের পরিচ্ছদের মর্যাদা। এটা-সেটা দিয়ে বর্ম, হাত-পায়ের সুরক্ষার কভার, এমনকি শিরস্ত্রাণও জোগাড় হয়ে গেল তাঁর। হয়তো বাড়ির কেউ আগে সৈনিক বা ডাকাত ছিল, তাই সহজে মিলে গেল এত সব। দন কিহোতে একদিকে যেমন ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’ গোছের, অন্যদিকে জীবনে গুটিকয় মানুষ ছিল তাঁর নামমাত্র পরিজন। যেমন উনিশ বছর বয়সী এক ভাতিজি/ভাগনি, চল্লিশোর্ধ্ব এক গৃহপরিচারিকা, মাঠে কাজ করার এক লোক আর দুই বন্ধু: একজন গ্রামের অধস্তন পাদরি, অপরজন এক নাপিত। দন কিহোতের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, আপাত যৌনতায় অনভিজ্ঞ, নিজের ধারণায় নাইটদের শুদ্ধ প্রতিনিধি তিনি। যদিও কাছাকাছি থাকেন এমন এক গাট্টাগোট্টা চাষি মেয়ে আলদোনসা লোরেনসোর দিকে তাঁর বিশেষ নজর আছে। এই নারীকেই দন কিহোতে দুলসিনিয়া দেল তোবোসো নামক জনৈক অভিজাত ও মহীয়সী হিসেবে ভাবতে থাকেন। যিনি আবার তাঁর সুখস্বপ্নের আদর্শ নায়িকা। দন কিহোতে সব ধরনের পাগলামির ঊর্ধ্বে উঠে একসময় পরিচালিত করেন উদ্ভট সব নাইটসুলভ অভিযান।
স্পেনের জাতীয় গ্রন্থাগারের বাইরে সেরভানতেসের ভাস্কর্য