ক্রিকেট পাকিস্তানে কেবল একটি খেলা নয়; এটি তাদের উত্তরাধিকার, আবেগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই খেলাটিকে অবলম্বন করে দিন কাটাচ্ছে, জাতি গঠনের হাতিয়ারও এই ক্রিকেট। করাচির ঘিঞ্জি চায়ের ধাবা থেকে শুরু করে লাহোরের অলিগলি, ইসলামাবাদের জৌলুস কিংবা বেলুচিস্তানের পাহাড়ঘেরা ছোট্ট গাঁয়ে ক্রিকেটই প্রধান উপজীব্য। সেই পাকিস্তানে ২৯ বছর পর আইসিসি ইভেন্ট হতে যাচ্ছে, তাই সাজসাজ রব তো পড়বেই।
রোববার রাতে লাহোরে যার কিছুটা দেখা মিলেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর দু’দিন আগে ঐতিহাসিক লাহোর ফোর্টে ‘দেওয়ান-ই-খাস’ নামক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আসরের পর্দা উন্মোচন হয়েছে। ক্রিকেটীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি কনসার্ট, আতশবাজি, আলোর খেলায় মোহনীয় হয়ে উঠেছিল লাহোর দুর্গ। ১৯ ফেব্রুয়ারি করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
লাহোর ফোর্টে জাঁকজমকপূর্ণ পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে আসন্ন টুর্নামেন্টের দারুণ একটি প্রিভিউ নানা বর্ণে ফুটিয়ে তোলা হয়। আলোক ছটায় দুর্গের সদর দরজায় মোহনীয়ভাবে ভেসে উঠছিল সবকিছু। সেখানে একটা বড় অংশজুড়ে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও ছিল। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই আসর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আয়োজন, যেখানে আবার ভারতকে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন সরফরাজ খানের নেতৃত্বাধীন ২০১৭ সালের ট্রফিজয়ী দলের সদস্যরা। মঞ্চে তুলে ধরা হয় পাকিস্তানের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
পাকিস্তানে সর্বশেষ আইসিসি ইভেন্ট হয়েছিল ১৯৯৬ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ভারতের সঙ্গে ওই আসরের যৌথ আয়োজক ছিল তারা। এর পর নিরাপত্তা ইস্যু, রাজনৈতিক অস্থিরতা পাকিস্তান থেকে ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা সে কফিনে যেন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল। এর অনেক বছর পর পাকিস্তানে ফিরে ক্রিকেট। দুই বছর আগে এশিয়া কাপ দিয়ে তারা কোনো আন্তর্জাতিক আসর আয়োজন করেছিল। আর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে পাকিস্তানে পুরোদমে ফিরছে ক্রিকেট।
বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানোর মওকাও এই আসর। যদিও ভারত এই আসর খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছে না বলে কিছুটা অপূর্ণতা থাকছেই। তার পরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন পাকিস্তানের জন্য বিরাট কিছু। তাই তো লাহোরের পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সভাপতি মহসিন নাকভী বলেন, ‘এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে ২৯ বছর পর পাকিস্তানে আইসিসি ইভেন্ট ফিরছে। তাই এই আসর আমাদের কাছে কোনো টুর্নামেন্টের চেয়েও বড় কিছু। পাকিস্তানের আতিথেয়তা ও ক্রিকেটের ভালোবাসা দেখানোর এটি দারুণ একটি সুযোগ।’
লাহোর ফোর্টে এই ঐতিহাসিক আয়োজনের পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি অবদানের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন নাকভী। একই সঙ্গে পাকিস্তানি দর্শকদের মাঠে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি, ‘এখন স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ করার দায়িত্ব হলো আপনাদের।’
তবে এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে একটি বিষয় নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্কও দেখা গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়া ৮ দলের মধ্যে ৭ দলের পতাকা লাহোর স্টেডিয়ামে দেখা গেলেও ছিল না ভারতের পতাকা। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ভারত তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছে না। তারা দুবাইয়ে আসরের সব ম্যাচ খেলবে। সে জন্যই হয়তো পিসিবি তাদের পতাকা রাখেনি। এ ব্যাপারে অবশ্য পিসিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ই আসর
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এই তারিখ ধার্য করেন।
গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়; পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।