চীনের সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের জন্য উপযোগী: চীনা রাষ্ট্রদূত
Published: 18th, February 2025 GMT
সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিতে বাংলাদেশে কোনো প্রতিযোগিতা বোধ করে না চীন। চীন দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করে আসছে। আর চীন যা সরবরাহ করে তা বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় উপযোগী বলে মনে করে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়াও ওয়েন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় চীনের দূতাবাসে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ সময় দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা সমন্বিত। গত বছর চীনের নৌবাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চীন সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। আমরা কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা বোধ করি না। আমাদের সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতিতে উপযোগী।
দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ৫০ বছর ধরে অভিন্ন স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে দুই দেশ। চীন সবসময়ে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়। একে অপরের প্রতি সম্মান, সাম্য এবং অভিন্ন স্বার্থকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, এটাই চীনের নীতি। দুই দেশের বন্ধুত্বের এ ভিত্তি পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশের সার্বভৌম এবং জাতীয় ঐক্য সুরক্ষায় সহযোগিতা করবে চীন।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর করেন চীনে। যা দুই দেশের রাজনৈতিক সহযোগিতার স্পষ্ট বার্তা দেয়। সেই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং বন্ধুত্বকে সুসংহত ও গভীর করার সুযোগ তৈরি করেছে। বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, দুই দেশের সম্পর্ক সব সময়ে সামনের দিকে প্রবল গতিতে এগিয়ে গিয়েছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী ঢাকা–দিল্লি সম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তিতে প্রভাব পড়বে কি–না জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, এ প্রশ্ন চীন নয় ভারতের রাষ্ট্রদূতকে করতে হবে। আমরা আশাকরি ইস্যুগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
ঢাকা–দিল্লির উত্তেজনা কমাতে চীন মধ্যস্থতা করবে কি না– উত্তরে তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশিরা যথেষ্ট বিচক্ষণ নিজেদের সমস্যা সমাধানে।
ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত জানান, চীনের কুনমিং প্রদেশের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার ধরণ, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক চিকিৎসা সেবার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। সবকিছু ঠিকঠাক এগুলো মার্চের শুরুতে বাংলাদেশের রোগীদের প্রথম দলটি চিকিৎসাসেবা নিতে কুনমিংয়ে যাবে এমনটাই আশা করছে চীন।
প্রথম বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি জানান, ঢাকায় ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য বাংলাদেশের কাছে থেকে বিস্তারিত প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছে চীন। এছাড়া চীন তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত আধুনিক সরঞ্জাম দেবে।
তিস্তা প্রকল্প দ্রুত শুরু করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন প্রস্তুত। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিস্তা নিয়ে এক প্রশ্নে চীনা তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন প্রস্তুত। তবে বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এ প্রকল্প দ্রুত শুরু করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। বাংলাদেশ সরকার তিস্তা প্রকল্পের জন্য চীনের সহায়তা চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। প্রকল্পটি মূল্যায়ন করার পর ২০২৩ সালে ভাগে ভাগে প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেয়। এরপর থেকে আমরা সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি।
মানচিত্র বিতর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে ও ওয়েবসাইটে চীন-অরুণাচল সীমান্তের ভুল মানচিত্র নিয়ে চীনের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এটা জানিয়েছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন চাই, আশা করি এ বিষয়ে চীনের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল দ শ সরক র পর স থ ত সহয গ ত প রকল প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস