হতাশা কেড়ে নিল জবি শিক্ষার্থী প্রাণ
Published: 19th, February 2025 GMT
আত্মহত্যার চেষ্টা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মো. আহাদ হোসেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.
প্রক্টর তাজাম্মুল হক বলেন, “আহাদ গত দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। কিডনি ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই দুইদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ তার বিভাগ নিয়মিত হাসপাতালে যোগাযোগ রাখছিল। আমাদের শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত।”
তিনি আরো বলেন, “আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমরা খুব দ্রুত কাউন্সেলিং সেন্টার ও বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টাদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করব।”
জানা গেছে, আহাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। গত সোমবার রাতে তিনি সূত্রাপুর এলাকায় মেসে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মেসের অন্য সদস্যরা বুঝতে পেরে তাকে উদ্ধার করে মিডফোর্ড হাসপাতালে নেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ম্যাক্সওয়েল প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিভাগের শিক্ষক, সহপাঠী ও মেসের বন্ধুরা জানান, আহাদ দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে আহাদ ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছিলেন না। তবে তার হতাশার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. বায়েজিদ আলী বলেন, “গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আহাদের ব্যাচের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা চলাকালে সে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলে, ‘আমি তিনদিন ঘুমাইনি, অসুস্থ বোধ করছি’। তখন আমাদের ছাত্র উপদেষ্টা ও অন্য শিক্ষকেরা তাকে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসায়। এ সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হলে তাকে আমরা কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দিই।”
তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পর সে কিছুটা সুস্থ হলে আবার পরীক্ষা দেয়। পরে সে তার কোর্স শিক্ষককে কল দিয়ে ধন্যবাদও জানায়। সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ তার আত্মহত্যা চেষ্টার খবর শুনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা রহমান শাম্মী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। রাজধানীর পুরান ঢাকার কাঠের পুলের তনুগঞ্জ লেনের একটি ছাত্রী মেস থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।