ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় নবনিযুক্ত ওসিকে শুভেচ্ছা জানানো উপলক্ষে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) ভাঙ্গা উপজেলা শাখার নেতাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের দুই নেতাকে দেখা গেছে। গত সোমবার ভাঙ্গা থানায় এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল বুধবার গণঅধিকার পরিষদ ভাঙ্গা শাখার আহ্বায়ক মো.
গণঅধিকার পরিষদের ভাঙ্গা শাখার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান ও সদস্য সচিব মো. আতিকুল্লাহ হেলাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মিরু মাতুব্বরের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। ১৭ ফেব্রুয়ারি ভাঙ্গা থানায় নবনিযুক্ত ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর মিরু মাতুব্বরের সঙ্গে ছবি তোলায় গণঅধিকার পরিষদ ভাঙ্গা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব করিম শরীফকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো। তা ছাড়া কেন তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতা করিম শরীফ সমকালকে বলেন, তিনি নোটিশটি পেয়েছেন। নোটিশের জবাব যথাসময়ের মধ্যেই দেবেন। তাঁর দাবি, মিরু মাতুব্বরের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক কোনো দিন ছিল না, এমনকি তাঁকে চেনেনও না।
ওসি শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, জিওপি নেতা আনিসুর রহমান তাঁকে জানিয়েছেন, ওই দুই নেতা (মিরু মাতুব্বর ও বিপুল মুন্সী) আগে আওয়ামী লীগ করতেন। তারা গণঅধিকার পরিষদে নতুন যোগ দিয়েছেন। এই থানায় তিনি (ওসি) সবেমাত্র যোগদান করেছেন, সবাইকে ঠিকমতো চেনেন না।
ফেসবুকে তিনটি ছবি ছড়িয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যায়, ওসির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে থানা ফটকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের দু’জন নেতাকে নিয়ে ছবি তুলছেন গণঅধিকার পরিষদের ভাঙ্গা শাখার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান ও সদস্য সচিব মো. আতিকুল্লাহ্ হেলালসহ দলের কয়েকজন নেতাকর্মী। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ওসিকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন নেতারা। এ সময় ওসির বাঁয়ে ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিরু মাতুব্বর, ভাঙ্গা পৌর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপুল মুন্সী ও গণঅধিকার পরিষদ ভাঙ্গা শাখার নেতৃবৃন্দ। সেলফি তুলছেন গণঅধিকার পরিষদ ভাঙ্গা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব করিম শরীফ।
এই দুটি ছবির পাশাপাশি আরেকটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। সেখানে ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মুন্সী এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিরু মাতুব্বর এবং ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী রয়েছেন। দুই নেতাকে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে দিচ্ছেন এমপি।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শিকদার সাইদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘মিরু মাতুব্বর ও বিপুল মুন্সি সাবেক এমপি
নিক্সনের অনুসারী ছিলেন। তাদের লালনপালন করতেন আওয়ামী-বিএনপি লীগের সুবিধাবাদী জাফর মুন্সী ও বাকি মাতুব্বর (সাবেক পৌর কাউন্সিলর)।’
গণঅধিকার পারিষদের নেতারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তার দায়ভার তাদেরই নিতে হবে মন্তব্য করে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ ভাঙ্গা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্মরণ আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা ভোল পাল্টে বিএনপিসহ অন্য দলে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
ফোন না ধরায় এ বিষয়ে মিরু মাতুব্বর বা বিপুল মুন্সী কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গণঅধিকার পরিষদ নেতা আনিসুর রহমান বলেন, নোটিশের জবাব অনুযায়ী করিম শরীফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণঅধিকার পরিষদ ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. ফরহাদ হোসেন বুধবার রাতে সমকালকে বলেন, আনিসুর রহমান ও আতিকুল্লাহ হেলালের সঙ্গে ছবিতে আওয়ামী দোসর দু’জনকে দেখা গেছে। তারা কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে চেনেন না বলে জেলা কমিটিকে জানিয়েছেন। তার পরও বিষয়টির খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে দু’জনের বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅধ ক র প ম ত ব বর উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আসিফের জন্য গণঅধিকার পরিষদের দরজা সবসময় খোলা: রাশেদ খান
উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, তার জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। তিনি আসলে যোগ্যতা ও মর্যাদা অনুযায়ী তাকে সম্মানিত করা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের পর আসিফ গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিতে পারেন এমন গুঞ্জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক সময় আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন এবং তার সঙ্গে আমাদের সখ্য রয়েছে। তিনি পদত্যাগ করার আগের দিনও তার সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদে আসার ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি যদি আমাদের সঙ্গে আসতে চান সেক্ষেত্রে তার যোগ্যতা ও মর্যাদা অনুযায়ী তাকে সম্মানিত করা হবে।’’
রাশেদ খান বলেন, ‘‘আন্দোলন সংগ্রমে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তিনি নায়ক। তিনি চাইলে যে কোনো দলে যোগদান করতে পারেন। অথবা নতুন দলও গঠন করতে পারেন। সেই স্বাধীনতা তার রয়েছে। যেহেতু আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, আমাদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে, সেক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদে আসলে তার জন্য ভালো হবে। তিনি সহজে আমাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন। যেটি অন্য দলের ক্ষেত্রে তার জন্য কঠিন হবে। তিনি যদি চান গণঅধিকার পরিষদে আসতে পারেন। তার জন্য গণঅধিকার পরিষদের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে।’’
‘‘তিনি (আসিফ) উপদেষ্টা ছিলেন, সরকারে থাকলে সমালোচনা হয়। বয়স তো খুব বেশি না, এই বয়সে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি করেছেন। আমরা মনে করি বয়স বাড়ার সঙ্গে তার ভেতরে পরিপক্বতা বাড়বে। বুঝবেন, দেখবেন, শিখবেন। তার ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করা এই মুহূর্তে সমীচীন নয়,’’ বলেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে রাশেদ বলেন, আসিফ মাহমুদের জন্যই ৬ আগস্টের কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করা হয়। এই সাহসী ভূমিকা ছিল তার। যে সিদ্ধান্তের কারণে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হয়। তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন রাশেদ খান।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এরপর থেকেই গণঅধিকার পরিষদে আসিফের যোগদান নিয়ে গুঞ্জন ছড়িযে পড়ে। যদিও এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি আসিফ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//