অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে, পিটুনির শিকার দুই কিশোর এখনও প্রিজন সেলে
Published: 20th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের সময় দেশিয় অস্ত্র হাতে অবস্থান নেওয়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করলেও অন্যদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে।
এ দিকে সংঘর্ষের ঘটনায় কুয়েটের সিকিউরিটি ইনচার্জ মনিরুজ্জামান লিটন বাদি হয়ে বুধবার রাতে নগরীর খানজাহান আলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মামলায় কাউকে গ্ৰেপ্তার দেখানো হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে শিক্ষার্থীদের নির্মম পিটুনির শিকার কিশোর ৪০ ঘণ্টা ধরে প্রিজন সেলে আটক রয়েছে। সেখানে ১২ বছর বয়সী আরেক কিশোরও রয়েছে। সুস্থ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ তাদের প্রিজন সেলে আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে এক কিশোরকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক শিক্ষার্থী কিশোরকে পেটাচ্ছেন। এক সেনাসদস্য রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। সে অবস্থায়ও তাঁকে আঘাত করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আক্রান্ত কিশোর কুয়েট ক্যাম্পাসের পাশের যোগীপোল ইউনিয়নের জাব্দিপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর বাবা আবুল বাশার বাদশা ভাঙরির দোকানে কাজ করেন, মা নাজমা বেগম কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। যোগীপোল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশেই তাদের বাড়ি। ইব্রাহিম নিজেও ঢাকায় চাকরি করেন। গত রোববার রাতে ছুটিতে খুলনার বাড়িতে আসেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে গিয়ে জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে আটক করে প্রিজন সেলে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ইব্রাহিমের বয়স ১৯ এবং আরাফাতের বয়স দেখানো হয়েছে ১২ বছর। ইব্রাহিমের বাবা বাদশা বলেন, ইব্রাহিমের বয়স ১৭ বছর। ৪০ ঘণ্টা ধরে তারা সেখানেই রয়েছেন।
প্রিজন সেলের সামনে কান্নাকাটি করছিলেন কিশোরের মা নাজমা বেগম। তার মাধ্যমে ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় এক পাশে ছাত্র, অন্য পাশে বিএনপির লোকজন ছিল। মাঝে মন্টুর ক্লিনিকের সামনে তারা কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল। ছাত্রদের ধাওয়ায় অন্যরা পালিয়ে গেলে সে দৌড়ে ক্লিনিকের ভেতর ঢুকে আশ্রয় নেন। সেখানে অন্য গ্রুপেরও কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে ক্লিনিকে ঢুকে সবাইকে কমবেশি পিটিয়েছে ছাত্ররা।
প্রিজন সেলে আটক অন্যরাও ইব্রাহিমের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। তারা জানান, উৎসাহী হয়ে সংঘর্ষ দেখতে এসেছিল বেশ কয়েকজন কিশোর। বাকিরা পালিয়ে গেলেও কিশোর ইব্রাহিম পাশের একটি ক্লিনিকে আটকা পড়েন। আরাফাত আটকা পড়ে আরেকটি ভবনের ছাদে। সেখান থেকে তাদের আটক করা হয়।
মঙ্গলবার মারধরের পর ইব্রাহিমকে কুয়েট সড়কের ফ্রেশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক দাউদ আলী মীর বলেন, ছেলেটির মাথা সামান্য কেটে গিয়েছিল। ড্রেসিংয়ের পর রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। সেলাই লাগেনি। আঘাত ছোট হওয়ায় আমরা তখনই ছেড়ে দিয়েছি।
কেন কিশোরকে আটক করা হলো– জানতে চাইলে খানজাহান আলী থানার ওসি (তদন্ত) সনজিত কুমার ঘোষ বলেন, ‘ওই কিশোরকে আটক করা হয়নি’। কয়েকবার কিশোরের বাবার নাম ও ঠিকানা তাঁকে দেওয়া হলে, প্রতিবারই তিনি আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, কুয়েটের ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারা অসুস্থ হওয়ায় প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো.
পরিচয় মিলেছে অস্ত্রধারীদের
ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে বেশ কয়েকজনকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এর মধ্যে হাফ হাতা শার্ট ও মুখে গামছা জড়িয়ে রামদা হাতে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিটি দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কার করার বিষয়টি জানানো হয়।
খুলনা মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, মাহবুব অনেক আগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। এখন তিনি কোনো পদে নেই। কুয়েট এলাকায় তার অবস্থান ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হয়েছে, এটা দলের কোনো বিষয় নয়।
সংঘর্ষের সময় কালো হাফ হাতা টি-শার্ট এবং রামদা হাতে আরও একজনকে দেখা গেছে। তার নাম কামাল হোসেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তার পেছনে লাঠি হাতে অবস্থান করছিলেন হেলাল, তিনি শ্রমিক দলের সঙ্গে জড়িত।
খানজাহান আলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন বলেন, কামাল কখনও বিএনপি, কখনও যুবদল আবার কখনও স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে যায়। তিনি দলের কোনো পদে নেই। হেলালেরও একই অবস্থা। শ্রমিক দলের মিছিলে গেলেও কোনো পদে নেই। তারা কেন সেখানে গিয়েছে তারাই বলতে পারবে।
মামলা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কুয়েটের সিকিউরিটি ইনচার্জ মনিরুজ্জামান লিটন বাদি হয়ে বুধবার রাতে নগরীর খানজাহান আলী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ছ ত রদল স ঘর ষ র সময় প র জন স ল য বদল র অবস থ ন ক দল র ক র কর র বয়স র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ