গৃহবধূকে ধর্ষণ, প্রতিশোধ নিতে যুবককে হত্যা
Published: 21st, February 2025 GMT
কলমাকান্দায় রাজীব তালুকদার নামে এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে বড়খাপন ইউনিয়ের গোবিন্দপুর গ্রামের একটি রাস্তার পাশ থেকে রাজীবের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতেই রাজিবকে হত্যা করে আটক যুবক। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছে সে। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।
নিহত রাজিবের পরিবারের লোকজন জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি ফোন কলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান রাজিব। পরে শুক্রবার সকালে গোবিন্দপুর গ্রামের একটি রাস্তার পাশে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী।
নিহত রাজিব কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের বাউসারী গ্রামের রামকৃষ্ণ তালুকদারের ছেলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজীব এলাকায় চুরি করত। তার বিরুদ্ধে চুরির মামলা রয়েছে। এছাড়া এলাকার মেয়েদের উত্যক্ত করত। আটক যুবকের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে রাজিব। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিশোধ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজিবকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে লাশ গ্রামের নির্জন এলাকায় ফেলে রাখে। শুক্রবার সকালে এলাকার লোকজন লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধারের পরপরই সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে সে জানায় তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল রাজিব। বিষয়টি জানার পর প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করে সে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইলফোনে কল করে রাজিবকে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।