বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: বড়াইগ্রামের ওসি প্রত্যাহার
Published: 21st, February 2025 GMT
যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ না নেওয়ায় নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন পিপিএম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড়াইগ্রাম থানামোড় এলাকা থেকে একটি বাস জব্দ এবং চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আটক করে পুলিশ। ওই যাত্রীরা অভিযোগ করেন চালক-হেলপারের সযোগীতায় ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি বাস ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহী ছেড়ে যায়। চন্দ্রা থেকে ৮ জন যাত্রীবেশী ডাকাতদল বাসটিতে ওঠে। তারা চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের মীর্জাপুর এলাকার মধ্যে সকল যাত্রীর নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট ও দুই নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করে।
কয়েক ঘণ্টা পর মীর্জাপুরের একটি তেল পাম্পে বাসটি থামিয়ে ডাকাতরা নেমে যায়। এরপর চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার যাত্রীদের নিয়ে রাজশাহী যেতে অস্বীকৃতি জানায়। যাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চাপ সৃষ্টি করলে চালক বাস নিয়ে রওনা হয়।
পথে বড়াইগ্রাম থানা মোড় এলাকায় পৌঁছালে ওই বাসে থাকা বড়াইগ্রামের যাত্রীর সহায়তায় বাসটি থামায় এবং চালক-হেলপারকে পুলিশ হেফাজতে দেয়। এসময় দুই নারী যাত্রী এবং অন্যযাত্রীরা বড়াইগ্রাম থানায় অভিযোগ করতে গেলে ঘটনাস্থল টাঙ্গাইলের মীর্জাপুর হওয়ায় ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান।
ঘটনার তিন দিন পর শুক্রবার মীর্জাপুর থানায় ৮-৯ জন অজ্ঞাতনামা আসামির নামে মামলা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন পিপিএম বলেন, “প্রশাসনিক প্রয়োজনে শুক্রবার বিকেলে ওসি সিরাজুল ইসলামকে ক্লোজ করা হয়েছে।”
ঢাকা/আরিফুল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উপন্যাসের জন্ম ও প্রধান চরিত্র দন কিহোতের মধ্যস্থতা
বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে। বিশেষ করে আখ্যানের প্রধান চরিত্র খ্যাপাটে দন কিহোতের উদ্ভট, হাস্যকর, অত্যাশ্চর্য ও রোমাঞ্চকর খেয়ালি কর্মকাণ্ডগুলো। সেরভানতেস তাঁর আখ্যানে ‘যুক্তিহীনের যুক্তি’ দিয়ে এমন এক জগৎ উন্মোচন করেন, যা শুধু বিস্ময়কর নয়, আধুনিক ও চিরকালীনও। উদ্ভবের পর থেকে যে জীবন মানুষ যাপন করে আসছে সেই অসহায়ত্ব, প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা, নিয়তির দুর্লঙ্ঘনীয় রহস্য, সম্পর্কের জটিলতা, বৈপরীত্য আর সীমাহীন নির্বোধতা প্রভৃতি নানা মাত্রিকতায় এতে হাজির হয়েছে। তাই সচেতন পাঠকমাত্রই দন কিহোতের দুনিয়ায় নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন, তিনি যে দেশের যে কালের হোন না কেন। এমন সৃষ্টি সেরভানতেসের পক্ষে সম্ভব হয় এই কারণে যে তাঁর কালটা ছিল একদিকে স্পেনের সমৃদ্ধি ও বুদ্ধিবৃত্তির স্বর্ণযুগ এবং অন্যদিকে কলহ, যুদ্ধ, আত্মম্ভরী ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের যুগও। জীবনাভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও নিজ জীবনের ট্র্যাজেডি থেকেও সারভানতেস জীবনকে এমন নির্মোহভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন—জীবন ও জগৎকে ঠাট্টা-রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, কাহিনি শেষে দন কিহোতের গভীর জীবনোপলব্ধি—একটা গভীর সত্যে পৌঁছানো। স্পেনের অপর বিখ্যাত লেখকেরা, যেমন নাট্যকার লোকে দে ভেগা, কবি ফ্রাই লুইস দে লেওন, কেভোদা প্রমুখ এমন সময় ও অভিজ্ঞতা ফুঁড়েই বেরিয়ে এসেছিলেন। এঁরা সবাই সম্মিলিতভাবে রেনেসাঁর আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবমনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। পুরোনো যুগের ভাঙন এবং নতুন যুগের আবির্ভাবে স্পেন তখন সত্যি দিশাহারা ছিল।
বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে।আখ্যানে দেখা যায়, মধ্যযুগের ইউরোপীয় নাইটদের নিয়ে লেখা শিভালরিক রোমান্স পড়ে নিজের ভেতর এক কাল্পনিক জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন লা মানচার গ্রামের জনৈক আলোনসো কিহানো। ফলে গরিব এই ভদ্রলোক নিজে নাইট হয়ে ওঠেন একদিন দন কিহোতে নাম নিয়ে। তাই কিহানোর হাড় জিরজিরে ঘোড়াটা হয়ে গেল ডাকসাইটে রোসিনান্তে, বাড়ির পুরোনো পোশাক পেল নাইটদের পরিচ্ছদের মর্যাদা। এটা-সেটা দিয়ে বর্ম, হাত-পায়ের সুরক্ষার কভার, এমনকি শিরস্ত্রাণও জোগাড় হয়ে গেল তাঁর। হয়তো বাড়ির কেউ আগে সৈনিক বা ডাকাত ছিল, তাই সহজে মিলে গেল এত সব। দন কিহোতে একদিকে যেমন ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’ গোছের, অন্যদিকে জীবনে গুটিকয় মানুষ ছিল তাঁর নামমাত্র পরিজন। যেমন উনিশ বছর বয়সী এক ভাতিজি/ভাগনি, চল্লিশোর্ধ্ব এক গৃহপরিচারিকা, মাঠে কাজ করার এক লোক আর দুই বন্ধু: একজন গ্রামের অধস্তন পাদরি, অপরজন এক নাপিত। দন কিহোতের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, আপাত যৌনতায় অনভিজ্ঞ, নিজের ধারণায় নাইটদের শুদ্ধ প্রতিনিধি তিনি। যদিও কাছাকাছি থাকেন এমন এক গাট্টাগোট্টা চাষি মেয়ে আলদোনসা লোরেনসোর দিকে তাঁর বিশেষ নজর আছে। এই নারীকেই দন কিহোতে দুলসিনিয়া দেল তোবোসো নামক জনৈক অভিজাত ও মহীয়সী হিসেবে ভাবতে থাকেন। যিনি আবার তাঁর সুখস্বপ্নের আদর্শ নায়িকা। দন কিহোতে সব ধরনের পাগলামির ঊর্ধ্বে উঠে একসময় পরিচালিত করেন উদ্ভট সব নাইটসুলভ অভিযান।
স্পেনের জাতীয় গ্রন্থাগারের বাইরে সেরভানতেসের ভাস্কর্য