রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা ঘোরালেন ট্রাম্প
Published: 22nd, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাঁর কথা ঘুরিয়ে ফেলেছেন। গত শুক্রবার তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করেছে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা হিসেবে কিয়েভ শিগগিরই তার খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সই করবে।
ট্রাম্প এর আগে গত মঙ্গলবার বলেছিলেন, ইউক্রেনের এ যুদ্ধ শুরু করা ঠিক হয়নি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া। ওই সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে একে সামরিক অভিযান বলা হচ্ছিল। সে হিসেবে আগামীকাল সোমবার রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার তিন বছর পূর্তি হচ্ছে।
গত শুক্রবার ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া আক্রমণ করেছিল; কিন্তু তাদের আক্রমণ করতে দেওয়া উচিত হয়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আক্রমণ এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। পরে ট্রাম্প ধারণা দেন, শিগগিরই খনিজ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হবে। শুক্রবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করছি। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তি সই হবে।
পরে জেলেনস্কি এক ভিডিও বক্তৃতায় বলেন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা চুক্তির খসড়া তৈরিতে কাজ করছেন। তিনি আশা করছেন, এতে ন্যায্য ফল পাওয়া যাবে।
এর আগে খনিজ চুক্তিতে জেলেনস্কির রাজি হননি। যুদ্ধকালীন সাহায্য হিসেবে ওয়াশিংটনকে পরিশোধ করার জন্য ইউক্রেনের কাছ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদের দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘আমি দেশ বিক্রি করতে পারি না।’
জেলেনস্কির অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। গত বুধবার ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে মন্তব্য করে তাঁকে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে বলেন।
ইউক্রেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের সুর পরিবর্তনে ইউরোপীয় নেতারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁদের ধারণা, পুতিনের পক্ষে একটি শান্তিচুক্তিতে কিয়েভকে বাধ্য করা হতে পারে। জেলেনস্কি বলেন, ট্রাম্প রাশিয়ার অপতথ্যের মধ্যে ফেঁসে গেছেন। তবে পরে তিনি সুর নরম করেন। ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূতের সঙ্গে সাক্ষাতে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চান।
শুক্রবার সকালে হোয়াইট হাউসে পুতিনকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, পুতিনের সঙ্গে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে; কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে আমার এত ভালো আলোচনা হয়নি। ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনের হাতে রাশিয়াকে আটকানোর মতো তেমন কোনো ‘কার্ড’ নেই; কিন্তু তারা খুব কঠিন আচরণ করছে।
পৃথকভাবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। রয়টার্স দেখেছে, ওই প্রস্তাবের তিন অনুচ্ছেদে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সময় প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং সংঘাত দ্রুত অবসানের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের চাওয়া—আগামীকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তাদের নিজস্ব প্রস্তাব গৃহীত হোক; যেখানে উত্তেজনা হ্রাস, দ্রুত শত্রুতা বন্ধ এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হোক।
জার্মানির সরকার বলেছে, দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও জেলেনস্কি ফোনালাপ করেছেন। তিনি শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি চান। তবে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে দুদা শান্ত থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা করতে পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল ট্রাম্পের সঙ্গে দুদার বৈঠক হওয়ার কথা।
রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বৈঠক
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভের বরাত দিয়ে গতকাল রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ইউক্রেনে প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে মস্কো এবং ওয়াশিংটন তাদের প্রথম আলোচনা করে। এর লক্ষ্য ছিল সম্পর্ক ঠিক করা এবং সংঘাতের অবসানের প্রস্তুতি। রিয়াবকভ বলেন, তৃতীয় কোনো দেশে আলোচনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ইউক র ন ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’