দুঃসময় থেকে সুসময়ে পৌঁছে দিয়েছে ‘আশ্রম’
Published: 22nd, February 2025 GMT
তখন পেশাগত জীবনে চরম বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন ববি দেওল। প্রকাশ ঝা পরিচালিত ‘আশ্রম’ সিরিজের কল্যাণে আবার পায়ের তলায় মাটি ফিরে পান এই বলিউড তারকা। গত বুধবার মুক্তি পেয়েছে অ্যামাজন এমএক্স প্লেয়ারের জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজটির তৃতীয় সিজনের দ্বিতীয় পর্বের ট্রেলার। ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে ববি বলেছেন, আশ্রম–এর আশ্রয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ভ্রমণ শুরু করতে পেরেছেন তিনি। আর এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তিনি পরিচালক প্রকাশ ঝাকেই দিয়েছেন। রীতিমতো আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ববি বললেন, ‘আজ আমি যা কিছু করছি, তা প্রকাশ ঝার কারণেই। একটা সময়ে হাতে কোনো কাজ ছিল না। তখন একটা কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে থাকতাম। নিজের ইমেজ বদলানোর চেষ্টায় ছিলাম। কোনো সুযোগই তখন প্রায় পাচ্ছিলাম না। এই চরম দুঃসময়ে আমার কাছে একটা ফোন আসে। আর আমাকে “আশ্রম ” বিষয়ে বলা হয়। আমাকে বলা হয় যে সিরিজটি পরিচালনা করছেন প্রকাশ ঝা। গুপ্ত ছবির ডাবিংয়ের সময় প্রকাশজির সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। সে সময় আমি ওনার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম।’
আরও পড়ুন‘দেওল পরিবারের প্রতিটি পুরুষ কাঁদেন’১৫ জুন ২০২৪ববি দেওল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা
দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।
২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।
তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।