পবিত্র রমজানে গত বছর দাম বেড়েছিল খেজুরের। শুল্ক–কর বাড়ানোর কারণে প্রভাব পড়েছিল খেজুরের দামে। দাম সহনীয় রাখতে এবার রোজার তিন মাস আগে খেজুরের শুল্ক–কর কমানো হয়। তাতে আমদানিতে খরচ কমে যায়। এতে বাড়তে শুরু করেছে আমদানিও।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ১ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১৯ হাজার ৬৮৮ টন। অবশ্য ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, রোজায় খেজুরের চাহিদা ৬০ হাজার টন। বন্দর দিয়ে এখন প্রতিদিন খেজুর খালাস হচ্ছে। তাতে রোজা শুরুর আগে খেজুরের আমদানি চাহিদার চেয়ে বেশি হবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের খেজুর আমদানি শুল্ক–কর কমানোর সুফল পাচ্ছেন ভোক্তারা। আমদানিতেও অনেকে যুক্ত হয়েছেন। তবে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিলিয়ে শুল্কায়ন মূল্য (যে মূল্যের ওপর শুল্ক–কর হিসাব করা হয়) কমানো হলে শুল্ক–কর আরও কমত। ভোক্তারাও আরও কম দামে খেজুর কিনতে পারতেন।

কেজিতে কমেছে ৫০-৩০০ টাকা

বাজারে ১৫ থেকে ২০ রকমের খেজুর পাওয়া যায়। আবার একই খেজুরের ভিন্ন ভিন্ন দাম রয়েছে। গত বছরের দামের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, সাধারণ মান থেকে উন্নত মানের খেজুরের দাম কেজিতে কমেছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা।

সরকারের খেজুর আমদানি শুল্ক–কর কমানোর সুফল পাচ্ছেন ভোক্তারা। আমদানিতেও অনেকে যুক্ত হয়েছেন। তবে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিলিয়ে শুল্কায়ন মূল্য (যে মূল্যের ওপর শুল্ক–কর হিসাব করা হয়) কমানো হলে শুল্ক–কর আরও কমত। ভোক্তারাও আরও কম দামে খেজুর কিনতে পারতেন।বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম

গতকাল রোববার চট্টগ্রাম স্টেশন রোডে খেজুরের পাইকারি বাজার ফলমন্ডিতে গিয়ে দেখা যায়, ইরাকের ‘জাহিদি’ খেজুর গত বছর রোজায় বিক্রি হয়েছিল ২৩০ টাকা কেজি। এবার একই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। মাঝারি আকারের মেডজুল গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি। এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ টাকা কেজি।

এ ছাড়া প্রতি কেজি দাব্বাস খেজুর ৩০০-৩৬০ টাকা, মাশরুখ ৪০০ টাকা, সাফারি ৬০০ টাকা, সৌদি আরবের আম্বর ৬০০ টাকা, নাকাল ২৮০ টাকা ও ছড়া খেজুর ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার একটু দামি খেজুরের মধ্যে মান অনুযায়ী আজোয়া ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মেডজুল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মিসরের আম্বর ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আল্লাহর রহমত স্টোরের কর্ণধার মো.

কামাল। তিনি বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম করভার কমানোর কারণে এ বছর আমদানি বেশি হয়েছে। এই রোজায় বাজারে সরবরাহ ঘাটতি নেই। দামও কেজিতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কম।

পাইকারির মতো খুচরা বাজারেও খেজুরের দাম কমছে। রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাব্বাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে মানভেদে প্রতি কেজি ৪০০-৪২০ টাকায়, নাকাল ৩২০-৩৫০ টাকা, জাহিদি ২২০-২৫০ টাকা, আজোয়া ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা এবং মেডজুল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।

রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে প্রতিবছর রোজার আগে খেজুর কেনেন শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। গতকাল সকালে তাঁকে পাওয়া গেল ভিআইপি ডেটস নামের দোকানে। সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই বোন ও নিজের শ্বশুরবাড়িতে প্রতিবছর রোজায় খেজুর পাঠান তিনি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। তিনি মধ্যম মানের আজোয়া খেজুর কিনেছেন ১০ কেজি। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা।

দামি খেজুরের মধ্যে মান অনুযায়ী আজোয়া ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মেডজুল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মিসরের আম্বর ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম কমলেও এখনো শুল্ক–কর বেশি

পবিত্র রমজান সামনে রেখে গত নভেম্বরে খেজুরের আমদানি শুল্ক কমায় সরকার। বিভিন্ন ধরনের খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত অগ্রিম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে এই সুবিধা আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

শুল্কায়ন মূল্য কমানো হলে প্রতি কেজিতে ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে।ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ডেটসের কর্ণধার মো. শফিউল আজম

আমদানিকারকেরা বলছেন, শুল্ক–কর কমানো হলেও এখনো খেজুর আমদানিতে কেজিপ্রতি শুল্ক–করের পরিমাণ বেশি। এর প্রধান কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে উচ্চ শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করার কথা বলেছেন আমদানিকারকেরা। এ নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৬ ফেব্রুয়ারি একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। রোজার চাহিদার সিংহভাগ খেজুর খালাস হওয়ায় ব্যবসায়িক বৈষম্য এড়াতে শুল্কায়ন মূল্য বহাল রাখা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুল্কায়ন মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে ওই সভায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়।

জানতে চাইলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ডেটসের কর্ণধার মো. শফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, শুল্কায়ন মূল্য কমানো হলে প্রতি কেজিতে ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১ হ জ র ৫০০ ট ক র খ জ র আমদ ন ফ র শ ফ র টস আমদ ন ত ৩০০ ট ক ল ইসল ম আরও কম গত বছর র কম ন বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

কোটার অধিনায়ক বাভুমা ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে করমর্দন

আর মাত্র এক রান!

লর্ডস তখন থমথমে উত্তেজনায় ঠাসা। গ্যালারির প্রায় সব দক্ষিণ আফ্রিকান দাঁড়িয়ে, যেন নিশ্বাস আটকে রেখেছেন। ব্যালকনিতে সবাই উঠে দাঁড়ালেও একজন তখনো বসে—টেম্বা বাভুমা। গালে হাত, চোখ মাঠের ভেতরে। ঠিক যেন একটা জীবন ধরে যে স্বপ্নটা দেখে এসেছেন, সেই মুহূর্তটা এখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে।

মিচেল স্টার্কের ফুলটস বলটা কাইল ভেরেইনার ব্যাটে লেগে ফাঁকা জায়গায় ছুটতেই কী যেন হলো। কেউ চিৎকার দিলেন, কেউ দিলেন লাফ, কেউ পাশের জনকে জড়িয়ে ধরলেন, কারও–বা চোখে জল। সেই উন্মাদনার কেন্দ্রে, ঠিক মাঝখানে, বাভুমা মাথাটা নিচু করে ফেললেন। যেন আড়াল করতে চাইলেন কিছু। জয় এসেছে। অবশেষে। একের পর ‘কাছে তবু কত দূরের’ যন্ত্রণা, ‘চোকার্স’ তকমার গ্লানি, আর একজন কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়কের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া মৌন সংশয়—সবকিছুই যেন সেই নত মাথার আড়ালে লুকিয়ে। চারপাশের হইচইয়ের মধ্যে ওই নিঃশব্দতায় তখন দুনিয়া–কাঁপানো চিৎকারও যেন নগণ্য।

কয়েক সেকেন্ড পর বাভুমা মাথা তুললেন। হয়তো আরেকটু সময় নীরবেই কাটিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁর চারপাশে তখন জড়ো হয়েছেন দলের অন্যরা। কেউ কাঁধে হাত রাখছেন, কেউ জড়িয়ে ধরছেন। লর্ডসের ব্যালকনিতে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের উদ্‌যাপন শুধু নয়, একটি জাতির আর একটি মানুষের জয়ের গল্পও লেখা হচ্ছিল।

বাভুমার গল্পে অনেক অধ্যায়। একটি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান পরিবারে এমন এক সময়ে তাঁর জন্ম, যখন বর্ণবাদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্ধকারে মানুষ আলো খোঁজে, হতাশায় খোঁজে আশা। সে কারণেই কি না দাদি তাঁর নাম রেখেছিলেন টেম্বা। সোজা বাংলায় বললে ‘আশা’ বা ‘বিশ্বাস’।

পরিবারের বাইরে, নিজের পাড়ার বাইরে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বাভুমাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় আশাবাদের শুরুটা ২০১৪ সালে। সে বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেক তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলে সেটিই ছিল কোনো কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের প্রথম ম্যাচ। তখন থেকেই বাভুমার বড় চ্যালেঞ্জটা হয়ে পড়ে দুটি।

প্রথমত, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করা। খুব বিশেষ কিছু নয়, জাতীয় দলের হয়ে খেলা সব ক্রিকেটারের জন্যই এমন চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু বাভুমার জন্য এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরাও যে ক্রিকেট খেলতে পারে, ব্যাটিং করতে পারে, দলের জন্য কিছু এনে দিতে পারে, সেটি প্রমাণ করা। আরও স্পষ্ট করে বললে দক্ষিণ আফ্রিকার জটিল সমাজব্যবস্থায় সেই চ্যালেঞ্জ জেতা, যেখানে প্রতিনিয়ত অনুচ্চারে প্রশ্ন ওঠে—কে খেলতে পারে আর কে পারে না, কে ব্যাট করতে পারে আর কে পারে না, কে অধিনায়ক হতে পারে আর কে পারে না, কে জিততে পারে আর কে পারে না।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলের চাপের মধ্যে ভেঙে পড়া, নকআউট ম্যাচে হেরে যাওয়ার ঘটনা ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকেই ঘটে আসছে। বিভিন্ন ম্যাচে বিভিন্ন ধরনের কারণ। কোথাও নিজেদের ভুল, কোথাও আবহাওয়া–দুর্ভাগ্য। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হার নিয়ে আলোচনা কিছুটা ব্যতিক্রম। বলা হয়ে থাকে, সেদিন কোটাপ্রথার কারণেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ফাইনালে জায়গা করার ম্যাচটিতে কাইল অ্যাবোটকে বসিয়ে ভারনন ফিলান্ডারকে খেলিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একাদশে অশ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়াতেই বোর্ড কর্তারা টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে তা করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এটি অস্বীকার করলেও ২০১৬ সালে রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই কোটাপ্রথা প্রবর্তনের ঘোষণা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড সিএসএ। দলের মধ্যে ন্যূনতম ৫৪ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ রাখতে হবে, যার মধ্যে ১৮ শতাংশ হবে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান (এ সিদ্ধান্ত পরে পর্যালোচনা করা হয়)।

ওই কোটাব্যবস্থাই বাভুমার জন্য হয়ে ওঠে হিতে বিপরীত। দলে জায়গা করার মতো যথেষ্ট পারফরম্যান্স করলেও অনেকের চোখেই তিনি হয়ে ওঠেন ‘কোটার খেলোয়াড়’। ধারণাটা তীব্রতর হয়ে ওঠে ২০২১ সালের মার্চে বাভুমা অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর। শুরুতে ছিলেন টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডের অধিনায়ক, ২০২২ বিশ্বকাপের পর টি–টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়ে টেস্টের দায়িত্ব নেন। বাভুমার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা

২০২১, ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনোটিতে ভালো করেনি। দুই আসরেই বাদ পড়ে সুপার টুয়েলভ থেকে। ভালো খেলেননি বাভুমা নিজেও। তবে এ ধরনের ঘটনায় অন্যদের সমালোচনাটা সামর্থ্যকেন্দ্রিক হলেও বাভুমার জন্য তা ‘কোটা’র দিকে মোড় নেয়। এত কিছুর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে ভালোমতোই। ‘কোটার অধিনায়ক’ নামে ফিসফাস থাকলেও বাভুমাই থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলের নেতৃত্বে। বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে কুইন্টন ডি ককের হাঁটু মুড়ে সংহতি না জানানোর ঘটনায় ভূমিকা এবং দলের মধ্যে ঐক্য রক্ষার জন্য প্রশংসা কুড়ান একজন নেতার মতোই।

এরপর ২০২৩ সালে রানের মধ্যে থেকেই ভারতে বিশ্বকাপে খেলতে যান বাভুমা। এই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের ৭টিতে জিতে সেমিফাইনালে ওঠে। তবে বাভুমা ব্যাট হাতে রান না পাওয়ায় আর টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়ে ওঠেন ‘মিম ক্যারেক্টার’।

তবে সেসব ট্রল, ব্যর্থতা আর সংশয়—সব পেছনে ফেলে বাভুমা এখন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গর্বিত মুহূর্তের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ২০২৪ সালের ১৪ জুন, লর্ডসের মাঠে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট—একটি মুহূর্ত, যা এনে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত আইসিসি ট্রফি। ১২টি সেমিফাইনাল ও ১টি ফাইনালে হারের পর শেষমেশ আইসিসির শিরোপা জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে বাভুমার জন্য মুহূর্তটি দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়িয়েও কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জয়ে নিহিত। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, সেখানে বলেছিলেন, ‘প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার গভীর তাৎপর্য আমি বুঝি।’ সেদিন খেলার দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে একজন ‘লিগ্যাসি তৈরি করা’ অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত করতে চাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন বাভুমা। সেই লিগ্যাসিই তৈরি করেছেন লর্ডসে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন বাভুমা। এর কয়েক দিন পর নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে বছরের প্রথম টার্মের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা লেখা নিয়ে আসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। লেখাটি এই স্কুলের পুরোনো এক ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া। ২০০১ সালে নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে গ্রেড সিক্সের শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল, ১৫ বছর পর তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও, লেখো। একটি ছেলে লিখেছে, ১৫ বছর পর আমি নিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে দেখি, এ জন্য মিস্টার এমবেকির (দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে করমর্দন করছি।’

দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখা সেই ছেলেটার নাম টেম্বা বাভুমা। সেই বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন এত দিন। এবার জিতেছেন ট্রফি, যে ট্রফির জন্য দেশের অপেক্ষা দশকের পর দশকের। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নিশ্চয়ই করমর্দন করবেন তাঁর সঙ্গে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার দিনই প্রেসিডেন্ট একটা টুইট করেছেন। সেই টুইটে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পাশাপাশি বিশেষভাবে আছে বাভুমার নামও, ‘আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রোটিয়াদের অভিনন্দন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। এই জয় তোমার, এই জয় গোটা জাতির।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ