জিয়ারত করতে গিয়ে দেখেন কবরে মা-ভাতিজার ‘লাশ’ নেই
Published: 25th, February 2025 GMT
ফজরের নামাজ শেষে মায়ের কবর জিয়ারত করতে আসেন ছেলে। এসে দেখেন মায়ের কবরটির মাঝখানে কুয়ার মত গর্ত। ভিতরে দেহাবশেষ নেই। মায়ের কবরের পাশেই অবস্থিত ভাতিজার কবর। এই কবরটিরও একই চিত্র। কুষ্টিয়ার কুমারখালী চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর-নূরপুর কবরস্থানে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
স্বজন ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, গতকাল সোমবার রাতের কোনো এক সময় ওই কবরস্থানের দুটি মরদেহের কঙ্কাল চুরির হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। কবরস্থানে নিহতদের স্বজন ও উৎসুক জনতা ভিড় করেন। খবর পেয়ে পুলিশ কবরস্থানের পাশের ভুট্টা ক্ষেত থেকে দুই টুকরো হাড়, কয়েক পিস কাটার যন্ত্র, একটি টাউজার জব্দ করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, প্রায় দুই বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পশ্চিম নগর সাঁওতা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার স্ত্রী ছারা খাতুন (৮৫)। তার মৃত্যুর মাসখানেক পরে মারা যায় তার নাতি ছেলে রাতুল (১৪)। সে মনির উজ জামানের ছেলে। রাতুল জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিল। তাদের দুজনের মরদেহ পাশাপাশি দাফন করা হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার ফজরের নামাজ শেষে ছারা খাতুনের ছেলে রইসুল বিশ্বাস কবর জিয়ারত করতে এসে দেখেন তার মা ও ভাতিজার কবরের মাঝখানে কুয়ার মত গর্ত করা। ভিতরে দেহাবশেষ নেই।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়পুর-নূরপুর কবরস্থানে উৎসুক জনতা ভিড় করেছে। কাজ করছেন পুলিশ। পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি কবরের মাঝখানে গর্ত। ভিতরে দেহাবশেষ নেই। পাশের ভুট্টা ক্ষেতে পড়ে আছে দুটি হাড়ের টুকরো, একটি টাউজার।
এ সময় রইসুল বিশ্বাসের ছেলে রিজভী বিশ্বাস বলেন, বাবা সকালে কবর জিয়ারত করে এসেছিলেন। এসে দেখেন দাদি ও চাচাতো ভাইয়ের কবর খুঁড়া। ভিতরে কিছুই নেই। তার ভাষ্য, কবরে কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন।
পশ্চিম নগর সাঁওতা গ্রামের মোতাহার উজ জামান বলেন, কবরস্থান থেকে দুইটি লাশের কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমবারের মতো এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভয়ে রয়েছেন অন্যান্য মরদেহের স্বজনরাও।
নূরপুর গ্রামের সামছুজ্জামান বলেন, কবরস্থানে চুরির ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। কবরস্থান এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ র র ঘটন কবরস থ ন য় র কবর
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।