বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু, ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন খালেদা জিয়াও
Published: 27th, February 2025 GMT
জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সভা শুরু হয়। এতে সারা দেশের প্রায় চার হাজার নেতা অংশ নিয়েছেন।
বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিই এই সভার উদ্বোধন করবেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এবারের বর্ধিত সভা করছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চলমান অস্থিরতা, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন—এ দুটি বিষয় সামনে রেখে দলীয় এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বানই হচ্ছে এই সভার মূল লক্ষ্য। এই আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নিজেদের ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি সামনে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরুর লক্ষ্য স্থির করেছে।
সভা শুরুর ২০ মিনিট আগে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন মাইকে ঘোষণা দেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার বিষয় সভা শুরুর আগে জানানো হলো। সভা শুরুর আগে দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী জানান, বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া ।
বর্ধিত সভায় থানা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেবল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। এ সভাকে ঘিরে সংসদ ভবন এলাকায় ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচিগুলো প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, বর্ধিত সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মহানগর ও জেলার সব থানা, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবেরা অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া এবং মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পাওয়া নেতাদেরও সভায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বেলা ১১ টা থেকে শুরু হয়ে দুপুরে কিছু সময় বিরতি দিয়ে রাত পর্যন্ত সভা চলবে। মূলত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উদ্বোধনী বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বর্ধিত সভা শুরু হবে। শুধু তৃণমূলের নেতারা সভায় বক্তব্য দেবেন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছাড়া কোনো কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। তৃণমূলের নেতাদের মতামত শুনে সবশেষে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বক্তব্য দেবেন। এর মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শেষ হবে। বর্ধিত সভা উপলক্ষে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে প্রধান করে ২৭ সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটি, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ২০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন ও মিডিয়া কমিটিও করা হয়েছে।
সভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় ও জাতীয় ঐক্য, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আগে জাতীয় নির্বাচনসহ চলমান বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ ত থ ক ব এনপ র কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার
গত বুধবার ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চক্র চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধ অংশ নিতে বাধ্য করে।
আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।
গত বুধবার গভীর রাতে ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন (৪০)। তাঁকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল শুক্রবার সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় হওয়া মানব পাচার আইনের মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তাঁদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন। সুলতান তাঁদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সেনাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।
সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) ঢাকার বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।
তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় নিয়ে তাঁদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তাঁরা রাশিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে সেখান থেকে তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তাঁরা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশে ফিরতেও পারছেন না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সিআইডি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। ফাবিহা জেরিন ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার। সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
অভিযান তদারকির সঙ্গে যুক্ত সিআইডি প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আলমগীর ২০০৮ সালে ছাত্র ভিসায় রাশিয়ায় যান। সেখানে বিয়ে করে তিনি ওই দেশের নাগরিকত্ব পান। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন ক্যাটাগরির ভিসায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় নেন। গত এক বছরে ১১ জনকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে তাঁদের ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকাও বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ফিরিস্তি দিয়ে আলমগীর কেড়ে নেন।
সিআইডির কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে রাশিয়ার সরকার দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাঁদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে।