মেরুদণ্ডের দুই কশেরুকার ভেতর যে ফাঁকা অংশ থাকে, সেটির নাম ডিস্ক। এটি যদি জায়গা থেকে সরে যায়, তখন তাকে ডিস্ক প্রলাপস বা পিএলআইডি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মেরুদণ্ডের সঙ্গে যে স্পাইনাল লিগামেন্ট ও মাংসপেশি থাকে, সেগুলো দুর্বল হয়ে গেলে এমনটা হতে পারে। অসচেতনভাবে সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ভারী বস্তু ওঠাতে গেলে, উঁচু স্থান থেকে পড়ে গেলে, সড়ক দুর্ঘটনায়, দীর্ঘক্ষণ বসে একই অবস্থানে কাজ করলে, এমনকি সামনে ঝুঁকে জুতার ফিতা বাঁধতে গেলে বা বেসিনে হাতমুখ ধুতে গেলেও ডিস্ক সরে যেতে পারে।

সাধারণত লাম্বার ফোর ও ফাইভ অংশে বেশির ভাগ সময় ডিস্ক প্রলাপস হয়ে থাকে। নারীরা এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন। ডিস্ক প্রলাপস শুধু কোমরেই হয় না, ঘাড়ে বা পিঠের যেকোনো অংশেও হতে পারে।

আরও পড়ুনবয়স ত্রিশের পর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ০৭ আগস্ট ২০২৪

যদি ঘাড়ের মেরুদণ্ডে ডিস্ক প্রলাপস হয়, তবে ঘাড়ের ব্যথা ক্রমেই হাতের দিকে ছড়িয়ে পড়বে ও তীব্র ব্যথা হবে। হাত ঝুলিয়ে রাখলে বা এক কাতে বিছানায় শুয়ে থাকলেও তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন। সঙ্গে হাত ঝিঁঝিঁ বা অবশ মনে হবে, হাতের শক্তি ধীরে ধীরে কমবে ও দুর্বল হয়ে আসবে। অনেক ক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে।

ডিস্ক প্রলাপস কোমরে হলে ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাঁটলে ব্যথা বাড়ে, হাঁটার সক্ষমতা কমে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে একটু ভালো লাগে। পায়ে জ্বালাপোড়া বা ঝিঁঝিঁ অনুভব হতে পারে, পায়ে শক্তি কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে পায়ের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে প্রস্রাব ও পায়খানা চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

আরও পড়ুনমাথার পেছন দিকে ব্যথা হলে কী করবেন ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করণীয়

ব্যথানাশক ওষুধের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিলে অনেক সময় ব্যথা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানতে ও ব্যায়াম করতে পারলে দুই–চার সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ভালো হয়ে যান ৯৫ ভাগ রোগী। কখনো কখনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন সামনে ঝুঁকে ভারী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকা, ভারী ওজনের কিছু বহন না করা, শোবার সময় আরামদায়ক বিছানা ব্যবহার করা।

ভ্রমণ ও হাঁটাচলার সময় কোমরে সাপোর্ট বা লাম্বার কোরসেট ব্যবহার করা উচিত। ভ্রমণের সময় গাড়ির মাঝামাঝি অংশে বসা ভালো।

হালকা গরম পানির সেঁক নেওয়া যায়।

মো.

সাইদুর রহমান, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, ঢাকা

আরও পড়ুনএকটু জোরে হাঁটলেই পা ব্যথা করে, কী করি?১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ