চুক্তির শর্ত নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি
Published: 28th, February 2025 GMT
ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি করছে কিয়েভ। চুক্তি সই করতে ওয়াশিংটনে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একটি চুক্তিতে সই করবেন।
চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনিজ সম্পদ থেকে আয়ের অর্ধেক একটি পুনর্গঠন তহবিলে জমা দেবে কিয়েভ। এই তহবিলের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় যৌথভাবে থাকবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। এই তহবিলের অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হবে এবং কোন কোন খনিজ সম্পদ এর আওতায় থাকবে, সে সম্পর্কে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে বলা হয়েছে, এর মধ্যে খনিজ সম্পদ, জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি গ্যাস টার্মিনাল ও বন্দরের মতো অবকাঠামোগুলো এর আওতায় থাকবে।
ইউক্রেনের সঙ্গে এই চুক্তির অর্থমূল্য কেমন হবে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, এতে করে শত শত কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সই করবেন না, যেখানে তাঁর দেশকে কয়েক প্রজন্ম ধরে ঋণের বোঝা বইতে হবে। দুই রাষ্ট্রনেতা এমন বক্তব্য দিলেও সম্ভাব্য এ চুক্তির শর্ত সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ার আশারাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্রসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার তৎপরতাও চালাচ্ছেন তিনি।
ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছেন ট্রাম্প। তিনি চাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব মস্কোর সঙ্গে একটি শান্তি সমঝোতা করুক কিয়েভ। এ জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন তিনি।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটনের নজর ইউক্রেনের বিপুল খনিজ সম্পদের মজুতের দিকে। ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে তার অর্ধেক নিয়ে নিতে চান। ইউক্রেন তাতেও রাজি। কিন্তু বিনিময়ে কিয়েভের প্রধান চাওয়া ইউক্রেনের নিরাপত্তার মার্কিন নিশ্চয়তা। কিন্তু সেই নিশ্চয়তা এখনো মেলেনি।
কিয়েভের আশা, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায় ট্রাম্পের সমর্থনের পাশাপাশি নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে।
সুর নরম ট্রাম্পেরইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় সুর নরম করেছেন ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে এমন অবস্থান নিতে দেখা যায়। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কির ব্যাপারে সুর নরম করে ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁর প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে।’
জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচার’ বলে করা মন্তব্যের বিষয়েও নমনীয়তা দেখান ট্রাম্প। এ বিষয়ে ওভাল অফিসে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমি এটা বলেছিলাম? আমার মনে হয় না, আমি এটা বলেছি।’
ইউক্রেন নিয়ে বিশেষ সম্মেলনইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের তৎপরতার মধ্যে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে একটি বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। আগামীকাল রোববার লন্ডনে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে ইউক্রেনের শান্তি সমঝোতার বিষয়ে ইউরোপের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন তাঁরা।
জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজসহ ইতালি, পোল্যান্ডসহ ইউক্রেনের অন্য মিত্রদেশগুলোর নেতাদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ওয়াশিংটন সফর শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’