তোমাদের বেতন হয় ভারতের কারণে—সমালোচকদের পাল্টা তোপ গাভাস্কারের
Published: 1st, March 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত তাদের সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলার মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে—এমন আলোচনায় যারপরনাই বিরক্ত সুনীল গাভাস্কার। ভারতের কিংবদন্তি এ ক্রিকেটার উল্টো সমালোচকদেরই তোপ দেগেছেন। বলেছেন, সমালোচকদের কথায় ভারতের কান দেওয়ার দরকার নেই। ভারতের কারণেই তাঁদের বেতন হয়।
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) হলেও ভারত সে দেশে যেতে রাজি হয়নি। পরে সমঝোতার ভিত্তিতে ভারতের সব ম্যাচ রাখা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই স্টেডিয়ামে। ভারত ফাইনালে উঠলে শিরোপানির্ধারণী লড়াইও হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেওয়া ৭ দলই একাধিক ভেন্যুতে ম্যাচ খেলছে। ভারতের সঙ্গে একই গ্রুপে থাকায় ম্যাচ খেলার জন্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডকে দুবাই ও পাকিস্তানে যাতায়াত করতে হয়েছে। আবার যে সব দলের ম্যাচ শুধু পাকিস্তানে, তাদেরও লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডিতে ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে। বিপরীতে ভারত ক্রিকেট দল দুবাইয়ে থেকে সেখানে অনুশীলন করে সব ম্যাচ একই মাঠে খেলছে।
কোথাও না যাওয়ায় রোহিত শর্মারা ‘স্পষ্টত সুবিধা’ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন ও মাইক আথারটন। পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার রাসি ফন ডার ডুসেনও বলেন, এক ভেন্যুতে সব ম্যাচ খেলায় ভারত যে সুবিধা পাচ্ছে, সেটা বুঝতে রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।
ভারতের সুবিধাসংক্রান্ত নাসের, আথারটনদের মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায়ই জানিয়েছেন গাভাস্কার। ভারতের কিংবদন্তি এ ক্রিকেটার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ইংল্যান্ডের বিদায়ের দিকে ইঙ্গিত করে ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘তাঁরা সবাই জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ। তোমাদের দল যে (সেমিফাইনালে) উঠতে পারল না, সে দিকে নজর দিচ্ছ না কেন? আমি তোমাদের এই প্রশ্নটাই করছি স্যার। লাগাতার ভারতের কথা না ভেবে তোমরা কি নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? তোমাদের দলের ছেলেদের মানসিক অবস্থা এমনই যে, তাঁরা ফলাফল নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না।’
নাসের, আথারটনদের প্রতি ভারতের সাবেক অধিনায়কের পরামর্শ, ‘তোমাদের ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে। তোমাদের দেশ নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে, যে দলের জন্য খেলছ তাদের নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে। বরং ওই দায়িত্বটা আরও বড়। সব সময়ই দেখি তাঁরা হা হুতাশ করে। ‘‘ভারত এটা করেছে, ভারত ওটা করেছে’’। লাগাতার চলতে থাকে। আমাদের এখন এ সব অগ্রাহ্য করার সময় এসেছে। তাঁরা হা হুতাশ করুক। আমাদের মনোযোগ দেওয়ার আরও ভালো জিনিস আছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান এখানেই থামেননি। ভারতের কেন এখন সমালোচকদের কথায় পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাসের, আথারটনদের রুজি–রোজগারে তাঁর দেশের ভূমিকার প্রসঙ্গও টেনেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারত এখন মানের দিক থেকে, আয়ের দিক থেকে, প্রতিভার দিক থেকে, বিশেষ করে অর্থ আয়ের দিক কোন জায়গায় আছে, সেটা তাঁদের ধারণাতেই নেই। টেলিভিশনের সম্প্রচার স্বত্ব এবং মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত আয়ের মাধ্যমে বৈশ্বিক ক্রিকেটে ভারতের বড় অবদান রয়েছে। তাঁদের বোঝা দরকার, বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের যে অবদান তার ওপরে তাঁদের বেতন নির্ভর করে।’
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। আগামীকাল গ্রুপ পর্বে দলটির শেষ ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?