পদ-পদোন্নতিসহ চাকরিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থামছে না। প্রায় দুই মাস থেমে থাকার পর এই আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব ঘিরে আন্দোলন আবারও মাঠে গড়িয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে থাকা ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
‘প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক বৈষম্যমূলকভাবে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদ ও আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে’ এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে রাস্তায় নেমে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন ২৫ ক্যাডারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকও যোগ দেন এই অবস্থান কর্মসূচিতে। দাবি আদায়ে এমন পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে এমন আন্দোলনে সাধারণত দেখা যায় না।
কর্মবিরতির ফলে স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে পরিষদভুক্ত কোনো কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তারা এদিন কাজও করেছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য জরুরি সেবা কার্যক্রম কর্মবিরতির আওতার বাইরে ছিল।
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের সদস্যরা গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন দপ্তরে এই কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিজ নিজ দপ্তরের সামনে কালো ব্যাজ পরে ব্যানারসহ অবস্থান করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট এ আদেশ (সাময়িক বরখাস্তের আদেশ) প্রত্যাহার না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আগে থেকে সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এক পক্ষে আছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্য পক্ষে আছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলেও থামানোর কার্যকর উদ্যোগ নেই। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে–বিপক্ষে নিজেদের কথা তুলে ধরা হচ্ছে। এর জের ধরে বিভিন্ন ক্যাডারের প্রায় এক ডজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও এই পরিস্থিতি থামছে না।
২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ গত শনিবার জানিয়েছিল, সম্প্রতি ফেসবুকে লেখালেখির মতো তুচ্ছ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১৩ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৈষম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ২৫ ক্যাডারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই পরিস্থিতি উল্লেখ করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় পরিষদ।
কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি
কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে অন্যতম বড় ক্যাডার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে তাদের কাজগুলো দেখভাল করা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে এই অধিদপ্তরের প্রাঙ্গণে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা অবস্থান নেন। এতে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানও অংশ নেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ ক্যাডারের কিছু বিষয় নিয়ে সম্মিলিতভাবে এখানে দাঁড়িয়েছেন। পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডার অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেছে।
শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, তাঁরা বেশ কিছু বৈষম্যের শিকার, আন্তক্যাডার বৈষম্য অন্যতম। ক্যাডার সদস্যদের অনেকেই মামলা বা হয়রানির শিকার, এগুলো নিয়ে যেন একটি সুন্দর সমাধান আসে, সে জন্য এই কর্মবিরতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তাঁরা বেশ কিছু বৈষম্যের শিকার, আন্তক্যাডার বৈষম্য অন্যতম। ক্যাডার সদস্যদের অনেকেই মামলা বা হয়রানির শিকার, এগুলো নিয়ে যেন একটি সুন্দর সমাধান আসে, সে জন্য এই কর্মবিরতি হচ্ছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান, মহাপরিচালক, মাউশিএই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের’ সভাপতি এবং মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ।
বিভিন্ন কলেজেও এই কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। তবে কোনো কোনো কলেজে পরীক্ষা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রধান কার্যালয়ের সামনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তারা।
কোথাও কোথাও কর্মবিরতির মধ্যে কর্মকর্তাদের কাজ করতে দেখা গেছে। যেমন সচিবালয়ে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন। এ বিষয়ে তথ্য ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বাস্তবতার কারণে’ সচিবালয়ের ভেতরে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করেননি।
সংকটের পেছনে সুযোগ ও পদোন্নতির বঞ্চনা
বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। চাকরিতে কাজের ধরনও যেমন আলাদা, তেমনি পদ-পদোন্নতি এবং সুযোগ-সুবিধাও আলাদা।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অভিযোগ, প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, করসহ হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি এবং সুযোগ–সুবিধায় এগিয়ে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকেন। বিশেষ করে পদোন্নতিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বেশি পিছিয়ে।
এসব নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য পৃথক দুটি পিএসসির কথা রয়েছে।
২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ধীরে ধীরে মূলধারা থেকে বের করার প্রয়াস রয়েছে।
বর্তমানে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সার্ভিসের (বর্তমান প্রশাসন ক্যাডার) ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার কথা বলেছে। বাকি ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা চান এই কোটা উঠিয়ে উন্মুক্ত পরীক্ষায় সব ক্যাডার থেকে উপসচিব করা হোক। তবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, চাকরিতে পছন্দক্রম দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী ক্যাডার নির্ধারণ হয়। সেখানে মাঝপথে এসে প্রশাসনের পদে অন্যদের প্রবেশ যৌক্তিক হবে না।
তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মূলত পদোন্নতি এবং সুযোগ–সুবিধার বৈষম্য থেকেই আন্তক্যাডারের দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সে ক্ষেত্রে যদি প্রতিটি ক্যাডারের পদোন্নতি ও সুযোগ–সুবিধায় সমতা আনা হয়, তাহলে এই সমস্যা এমনিতেই অনেকাংশে কেটে যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ক য ড র র কর মকর ত দ র ক য ড র র কর মকর ত র কর মকর ত দ র স ২৫ ক য ড র র ক ন কর মকর ত অন য ন য দ বন দ ব ব স এস কর ছ ন কর ত ক গতক ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।