মহাকাশের গভীরে এমন কিছু রহস্যময় বস্তু ঘুরে বেড়ায়, যাদের গ্রহের মতো ভর আছে, কিন্তু তারা আমাদের সৌরজগতের মতো কোনো নাক্ষত্রিক সিস্টেমে যুক্ত নয়। যাযাবরের মতো মহাকাশে ঘুরে বেড়ানোই তাদের কাজ। এদের বলা হয় প্ল্যানেটারি ম্যাস-অবজেক্ট বা পিএমও। 

২০০০ সালে এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন। তবে কীভাবে পিএমও তৈরি হয় তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না কারও। অবশেষে চীনের শাংহাই জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণাগারের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল সমাধান করেছেন এই রহস্যের।

বৃহস্পতিবার সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, নক্ষত্র জন্মানোর সময় তাদের চারপাশের গ্যাসীয় ডিস্কের সংঘর্ষের কারণেই এসব বস্তু তৈরি হয়। 

এর আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, পিএমও’র জন্ম নিয়ে দুটি সম্ভাব্য তত্ত্ব আছে। একটি তত্ত্ব বলছে, এগুলো নক্ষত্র তৈরিতে ব্যর্থ হয়েই এমন রূপ নিয়েছে। অর্থাৎ পিএমও হলো ব্যর্থ নক্ষত্র। অর্থাৎ ছোট গ্যাসীয় মেঘ থেকে এগুলো তৈরি হলেও নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু করতে পারেনি। 

আরেকটি তত্ত্ব বলছে, এগুলো বৃহস্পতি বা শনির মতো গ্যাসীয় গ্রহ, যারা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে তাদের নক্ষত্রের বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে।

কিন্তু নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ তত্ত্বগুলো ভুল প্রমাণ করেছিল। গবেষকরা দেখেছেন, ওরিয়ন নেবুলার একটি অংশে শত শত পিএমও আছে, যা আগের তত্ত্বগুলোর অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি। এদের ৯ শতাংশ জোড়া কিংবা ত্রয়ী বিন্যাসে থাকে। আর এগুলো ব্যর্থ নক্ষত্র বা ‘পালিয়ে আসা গ্রহ’ তত্ত্বের সঙ্গে মেলে না বলেই জানিয়েছেন শাংহাই জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণাগারের প্রধান গবেষক তেং হংপিং। তার নেতৃত্বাধীন গবেষণাদল বলছে, এমন অনেক পিএমও’র চারপাশে ২০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট পর্যন্ত বিস্তৃত গ্যাস ডিস্কও রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে এগুলো নক্ষত্র ছাড়াই তৈরি হয়েছে।

তেং বলেন, ওরিয়ন নীহারিকায় থাকা ট্রাপেজিয়াম গুচ্ছ হলো পিএমও তৈরির কারখানা। এখানে অনেক নক্ষত্র কাছাকাছি থাকে এবং দ্রুত ঘোরে। তাই সংঘর্ষ বেশি হয়।

চীনা গবেষক দল সুপারকম্পিউটারের সাহায্যে এই প্রক্রিয়ার একটি মডেল তৈরি করেছেন। তারা দেখেছেন, যখন দুটি নক্ষত্র নির্দিষ্ট গতিতে ও দূরত্বে পরস্পরের কাছ দিয়ে যায়, তখন তাদের চারপাশের গ্যাস ও ধূলিকণার চাকতি মাধ্যাকর্ষণের কারণে প্রসারিত হয়। এতে দীর্ঘ ও ঘন একটি কণার সেতু তৈরি হয়। এই সেতুগুলো পরে নিজের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ধসে পড়ে এবং স্বাধীন পিএমও তৈরি হয়।

চীন ২০২৮ সালে আর্থ ২.

০ নামের একটি টেলিস্কোপ পাঠাবে মহাকাশে। এটি আইনস্টাইনের আবিষ্কৃত মাইক্রোলেন্সিং নামের বিশেষ পদ্ধতিতে আলোর বিকৃতি ব্যবহার করে অদৃশ্য বস্তু খুঁজে বের করবে।

তথ্য ও ছবি: চায়না ডেইলি

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তত ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ