অটোরিকশার দখলে সড়ক চলাচলে ভোগান্তি মানুষের
Published: 3rd, March 2025 GMT
অটোরিকশার জন্য কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন না। সড়কে দ্রুতগতিতে চলাচল করায় প্রায়ই তারা গায়ের ওপর উঠিয়ে দেয়। অনেক সময় অঙ্গহানির ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে যাত্রীর চেয়ে সড়কে অটোরিকশার সংখ্যা অনেক বেশি। আবার এসব যানবাহন ঘিরে অনেক জায়গায় চলে চাঁদাবাজি। কথাগুলো কুমিল্লার মুরাদনগর বাজারের ব্যবসায়ী আবু কাউছারের।
উপজেলার সব সড়ক এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে। প্রধান সড়ক ছাপিয়ে গ্রামের অলিগলিতে বেপরোয়াভাবে চলছে এসব যানবাহন। দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ছে। এতে প্রায়ই যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষের। অভিযোগ উঠেছে, নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে চালকরা বেপরোয়া গতিতে চালানোয় ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অনভিজ্ঞ ও কিশোরের হাতে অটোরিকশা চালানোয় দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের কারণে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এ ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে এবং সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়কে বেপরোয়াভাবে অটোরিকশা চলছে। কে কার আগে যাবে, চলছে সেই প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা বেশি। তা ছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাস্তায় যত্রতত্র রাখার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এসব রিকশায় লাগানো হয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন ও এলইডি লাইট। এর ফলে হচ্ছে শব্দ দূষণ। এলইডি লাইটের কারণে রাতে চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে।
চালক আনোয়ারের ভাষ্য, সারাদিন অটোরিকশা চালিয়ে ৬-৭শ টাকা থাকে। এ টাকা দিয়েই সংসার চলে। নির্ধারিত জায়গায় অটোস্ট্যান্ড থাকলে সবার জন্য ভালো। যাত্রী ও চালকদের আইন মানা উচিত।
রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয় জানিয়ে স্কুল শিক্ষার্থী সাফায়াত ইসলাম বলছিল, ‘অনেক সময় আমাদের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়। অটোরিকশার সঙ্গে লেগে আমাদের অনেকের স্কুল ড্রেস ছিঁড়ে গেছে।’ পথচারী জোনায়েদ বক্তার ভাষ্য, ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশার কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ সড়কে চলাচল করতে ভয় পায়। প্রতিদিনই মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
উপজেলা সদরের স্কুলশিক্ষক আক্তার হোসেন বলেন, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উপজেলা সদরের ব্যস্ততম সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশা এখন উপজেলার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চেষ্টা করেও জনবলের অভাবে এসব যানবাহন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি অটোরিকশা রয়েছে।
যদিও মুরাদনগরে ১০ হাজারের বেশি অটোরিকশা রয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান বলেন, পৌরসভা না থাকায় অটোরিকশাগুলো ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ন্যস্ত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে। এতে জনগণের ভোগান্তি দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন ব যবস থ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জীবন বাঁচাতে রক্ত দিন
বাংলাদেশ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২ অনুসারে রক্তদাতার বয়সের সীমারেখা হচ্ছে ১৮ থেকে ৬০ বছর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান; ১৮ থেকে ৬৬ বছর বয়সের সীমারেখার মধ্যে সে দেশের মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গণ্য করা হয় বং তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ লোক রক্তদানে অভ্যস্ত। সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
অনুন্নত বিশ্বে এ রক্তদাতার হার ১ ভাগের কম। বাংলাদেশে এ রক্তদানের সংক্ষেপ চিত্র হচ্ছে, প্রতিবছর বিভিন্ন হাসপাতালের প্রয়োজন ১০ লাখ ইউনিট এবং স্বাস্থ্যবান সক্ষম নিরাপদ রক্তদাতাদের থেকে সংগৃহীত হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট।
সাধারণত অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর, যাঁরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, যাঁদের কোনো কঠিন রোগ নেই এবং যাঁরা কোনো মারাত্মক ব্যাধি অন্যের দেহে সঞ্চালনের আশঙ্কা বহন করেন না, বিশেষ করে এইচআইভি ভাইরাস; তাঁদের রক্তদাতা হিসেবে উপযোগী বলে গণ্য করা হয়।
রক্তদাতা হওয়া উচিত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও বিনা মূল্যে জীবন রক্ষাকারী মহাকল্যাণকামী দানের প্রতি আস্থাশীল। বিনা মূল্যে দানের রক্ত, অর্থের মাধ্যমে কেনা রক্তের চেয়ে অনেক নিরাপদ। বিভিন্ন দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবায় রক্তদাতা নির্বাচনে রক্তদাতা ও গ্রহীতার নিরাপত্তা বিধানে আইন প্রণীত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বছর বয়সী মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ডেনমার্কসহ কিছু দেশে ৭০ বছর বয়সেও রক্তদাতা নির্বাচিত হন, কিছু দেশ মা–বাবার সম্মতি ব্যতিরেকে ১৬ বছর বয়সী মানুষকেও রক্তদাতা হিসেবে নির্বাচিত করে।
রক্তের শিরা ছিদ্রকরণ (ভেনিসেকশন) পদ্ধতির একটি চিকিৎসা আইনসম্মত বিধান থাকা উচিত। একজন রক্তদাতা রক্তদানের পর অসুস্থ হলে রক্তদাতা নিজে বা তার নিকটাত্মীয়রা রক্তদানের কারণে অসুস্থ হয়েছেন বলে একটি বিরূপ ধারণার জন্ম নিতে পারে বলেই একজন সক্ষম রক্তদাতা অবশ্যই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং তাদের এমন কোনো অসুস্থতা থাকবে না যাতে সে সাধারণ রক্তদাতা হিসেবে নিগৃহীত হতে পারে। যেমন রক্তশূন্যতা, যক্ষ্মা, ক্যানসার, স্ট্রোক, এপিলেপসি, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, কার্ডিয়াক, রেসপিরেটরি অথবা রেনাল ডিজিজ। উচ্চ রক্তচাপের ব্যক্তিদের রক্তদাতা ও রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ উভয়েই নির্দ্বিধায় বলতে পারে যে রক্তদানের মাধ্যমে উভয় পক্ষই একটি বিপদমুক্ত মহৎ কাজ করছে।
রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ রক্তদানে ইচ্ছুক লোকজনের মাঝে রক্তদানের তথ্যবহুল কাগজপত্র সরবরাহ করলে এ রকম একটি কঠিন কাজ অনেক সহজ হতে পারে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা বোনম্যারো দানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, সে জন্য অনেক রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অনেক রেকর্ড সংরক্ষণ করে ম্যারোদাতা নিযুক্ত করতে সহায়তা করে। বিশ্ব মেরুডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের (Buskard,1991) বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় যে প্রায় চার লাখ বোনম্যারো ডোনার তাঁদের কাছে মজুত আছে, যাঁদের এইচএলএ প্রকারভেদও সম্পন্ন করা আছে।
প্রতিটি রক্তদান ও সংগ্রহের সামগ্রিক তথ্য রেকর্ড করা এবং বছরের পর বছর সংরক্ষণ করা উচিত। পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য যেমন রক্তের গ্রুপ রক্তদানে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার তথ্য, অণুজীব অ্যান্টিবডি উপস্থিতি, হঠাৎ বেহুঁশ বা পড়ে যাওয়ার ইতিহাস পরবর্তী সেশনের রক্তদানে অনেক সহায়তা করে। চলতি ও পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য–সংবলিত বিশালসংখ্যক রক্তদাতার প্যানেল কম্পিউটারে সংগ্রহ করা বর্তমানকালের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সমাজের সব স্তরের, সব ধর্মের, সব পেশার লোকজনকে আহ্বান জানাচ্ছি—
১. ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক সব সুস্থ নারী-পুরুষ, যাঁদের ওজন ১০০ পাউন্ড বা তার বেশি, তাঁরা প্রতি চার মাস অন্তর নিয়মিত রক্তদান করুন।
২. পরিচিতজনদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করুন।
৩. স্বেচ্ছা রক্তদাতা তৈরির আয়োজনে সক্রিয় সহযোগিতা করুন।
৪. স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত নেবেন না, এমনকি আপনজনের হলেও নয়; কারণ তার রক্তেও সুপ্ত থাকতে পারে সংক্রামক ঘাতক ব্যাধির জীবাণু।
৫. কখনো পেশাদার রক্তদাতার রক্ত কিনবেন না।
৬. রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না এবং বোনম্যারো নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।
৭. রক্তদান জীবনদান, তাই নিয়মিত রক্তদানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পরিবেশ বাঁচাতে বনায়ন যেমন পূর্বশর্ত। জীবন বাঁচাতে তেমনি দরকার নিরাপদ রক্ত।
ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। উপদেষ্টা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।