বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি মি. অ্যান্টোনিও হারমান বেঞ্জামিন।

তিনি এ দেশের তরুণ প্রজন্মের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, “তারা একটি দেশকে বদলে দিয়েছে এবং এর থেকে বিশ্ব একটি বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম যে বিশ্বকে বদলে দিতে পারে, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেটি তারা প্রমাণ করেছে।”

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস ইন এনভাইরনমেন্টাল ল অ্যান্ড ক্লাইমেট ল’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে: হারমান বেঞ্জামিন

শেষ হলো ঢাবি শিক্ষকদের ১৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা

তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে মানবজাতিকে বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানবিক কার্যক্রম, নৈতিক মূল্যবোধ বজায় ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।”

পরিবেশ আইনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “পরিবেশ আইনের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে আলোচনা করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও পৃথিবীকে রক্ষা করতে পরিবেশ সংরক্ষণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনগণকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিচারক, আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, সরকার, শিক্ষাবিদ, গবেষক, পরিবেশকর্মী ও তরুণ প্রজন্মের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা দরকার।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমদ খান অনুষ্ঠানে । 

আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হকের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত মি. পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. খুরশীদ আলম।

রাষ্ট্রদূত মি. পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তাদের হাত ধরে দেশের যেকোন পরিবর্তন সম্ভব। পরিবেশ সংরক্ষণসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ