বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে: হারমা
Published: 4th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি মি. অ্যান্টোনিও হারমান বেঞ্জামিন।
তিনি এ দেশের তরুণ প্রজন্মের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, “তারা একটি দেশকে বদলে দিয়েছে এবং এর থেকে বিশ্ব একটি বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম যে বিশ্বকে বদলে দিতে পারে, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেটি তারা প্রমাণ করেছে।”
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস ইন এনভাইরনমেন্টাল ল অ্যান্ড ক্লাইমেট ল’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে: হারমান বেঞ্জামিন
শেষ হলো ঢাবি শিক্ষকদের ১৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা
তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে মানবজাতিকে বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানবিক কার্যক্রম, নৈতিক মূল্যবোধ বজায় ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।”
পরিবেশ আইনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “পরিবেশ আইনের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে আলোচনা করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও পৃথিবীকে রক্ষা করতে পরিবেশ সংরক্ষণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনগণকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিচারক, আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, সরকার, শিক্ষাবিদ, গবেষক, পরিবেশকর্মী ও তরুণ প্রজন্মের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা দরকার।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হকের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত মি. পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. খুরশীদ আলম।
রাষ্ট্রদূত মি. পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তাদের হাত ধরে দেশের যেকোন পরিবর্তন সম্ভব। পরিবেশ সংরক্ষণসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।