বাণিজ্য এবং পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পাট রপ্তানি কমছে, যা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়। তবে পাটপণ্যের রপ্তানি বর্তমানের দ্বিগুণ করার বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নিয়ে এগিয়ে আসতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রস্তুত। 
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মণিপুরীপাড়ায় জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন উপদেষ্টা। জাতীয় পাট দিবস উদযাপন উপলক্ষে পাট মন্ত্রণালয় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। পাঁচ দিনের এ আয়োজন আগামী মঙ্গলবার শেষ হবে। আগামী বুধবার শুরু হচ্ছে ১৫ দিনের তাঁতবস্ত্র মেলা।  
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন,  পাটের বীজ, সার, পাট পচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, গুণগত মান উন্নয়নে সহায়তার জন্য ৩৫৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এ ছাড়া পাটশিল্পের সহায়তার বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম ও নীতি সহায়তা বাড়াতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। জেপিডিসির মাধ্যমে এক হাজারের বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। সরকার তাদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। 
শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, কভিড-পরবর্তী পাটজাত শিল্পপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল। তখন রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। কিন্তু কাঁচাপাটের বাজারে একটা অনিয়ন্ত্রিত মূল্য সৃষ্টি হলো, দুই হাজার টাকার পাট সাত হাজার টাকা হয়ে গেল। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে সরে যেতে শুরু করেন। এতে শিল্পোদ্যোক্তারা গত দুই-তিন বছর ধরে সমস্যায় পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে তাদের পরিত্রাণ দরকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

আব্দুর রউফ। তিনি পাট শিল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা কমসহ এ খাতে অন্য সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরেন। প্রদর্শনীতে ৪০টি স্টলে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রদর্শন করছেন। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ