নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে শিগগির গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আজ রোববার নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পেতে আইনে নির্ধারণ করে দেওয়া কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্ত কিছুটা সহজ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনে সংশোধনী আনার সুপারিশ আছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের। সে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সরকার এখনো সে সিদ্ধান্ত নেয়নি। শিগগির ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলোচনা শুরু করবে। এরই মধ্যে ইসি বিদ্যমান আইনে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, এ রকম একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হবে। এ সময়ের মধ্যে যদি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগে কেন ইসি বিদ্যমান আইনে প্রক্রিয়া শুরু করছে, জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সময়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এখানে যাচাই–বাছাই করার বিষয় আছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাই তাঁরা বিদ্যমান আইনে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে বলে তিনি জানান।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করা হয়। তখন জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নিবন্ধন পেতে কিছু শর্তের বিধান যুক্ত করা হয়।

ওই আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পাওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক–তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় থাকতে হবে এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

এসব শর্তে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। অন্তত এক–দশমাংশ জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় এবং অন্তত ৫ শতাংশ উপজেলায় বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে। দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম পাঁচ হাজার ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে দেশের অন্তত ২২টি জেলায় জেলা কার্যালয় এবং ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় থাকতে হয়। আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নিবন্ধন পেতে হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে অন্তত ৭টি জেলায় এবং ৬১টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকলেই হবে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সময় বিদ্যমান শর্তগুলো কতটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তখন নিবন্ধনের জন্য ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ১২টি দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দুটি ‘ভুঁইফোড়’ দলকে।

জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় ছাড়াও নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান থাকতে হয়। যেমন কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা, সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারীদের জন্য নির্ধারিত রাখা এবং পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, শিক্ষক–শিক্ষার্থী বা শ্রমিক ও অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা ইত্যাদি।

সংস্কার কমিশনও নিবন্ধন পেতে গঠনতন্ত্রে কিছু বিধান রাখার শর্ত দেওয়ার কথা বলেছে। সেগুলোর মধ্যে আছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা; দলের সব সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের তালিকা দলের ওয়েবসাইটে দেওয়া; রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিক সংগঠন, ভাতৃপ্রতিম বা অন্য যেকোনো নামে না রাখা; ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্টের অধীন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা, অর্থ পাচার) মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা ইত্যাদি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সদস য অন য য় পর য য় সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ