যুক্তরাজ্যের দুই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে আজ সোমবার তাঁদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়া ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে মস্কো। এতে করে ইউরোপের সঙ্গে খারাপ হতে থাকা রাশিয়ার সম্পর্ক আরও অবনতি হলো। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন-মস্কো।

নিজেদের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আনা অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর।

যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে নিলেও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সম্প্রতি বলেছেন, তাঁরা ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার জন্য সেনা পাঠানো ও উড়োজাহাজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যুক্তরাজ্যের এসব পদক্ষেপ ও ঘোষণা রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে।

রাশিয়া এমন এক সময়ে যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করতে যাচ্ছে, যার মাত্র কয়েক দিন আগে রাশিয়ার হয়ে গোয়েন্দাগিরি করার অভিযোগে বুলগেরিয়ার তিন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন লন্ডনের একটি আদালত। বুলগেরিয়ার এই তিন ব্যক্তি জান মার্সালেক পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়্যারকার্ডের সহায়তাপুষ্ট রাশিয়ার একটি গোয়েন্দা ইউনিটে কাজ করতেন। তাঁরা মস্কোর নিশানা করা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি ও কিছু ব্যক্তির ওপর নজরদারি করতেন। প্রসঙ্গত, ওয়্যারকার্ড বর্তমানে একটি দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান। আর অস্ট্রিয়ার নাগরিক জান মার্সালেক পলাতক।

ওয়াশিংটন-মস্কোর সম্পর্ক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার পর থেকে এবারই প্রথমবারের মতো দুই পশ্চিমা কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিল রাশিয়া। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেনে হাজার হাজার সেনা পাঠানোর পর রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলো দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ বলেছে, ‘এই দুই ব্রিটিশ কূটনীতিক আমাদের দেশে ঢোকার অনুমতি পাওয়ার পর মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছেন। তাঁদের “গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক কাজের আলামত” আমাদের হাতে আছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে।’

মস্কোর সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিদ্বেষপ্রসূত ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এটাই প্রথম নয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক টন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ