গাবতলী সোসাইটির সভাপতি, গাবতলী বাইতুল মোকাদ্দাস কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সহ-সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর ইসদাইর ও গাবতলীর বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) গাবতলীবাসীর পক্ষে ২৪১ জন বাসিন্দা লিখিত প্রতিবাদ লিপির মাধ্যমে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

প্রতিবাদ লিপিতে তারা উল্লেখ করেন, রফিকুল ইসলাম জীবনকে জড়িয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে চলেছে দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকা। এসব রিপোর্ট প্রকাশের পর আবার বিনামূল্যে যুগের চিন্তা পত্রিকা গাবতলী এলাকায় বিলি করা হচ্ছে, যা কিনা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক এবং চূড়ান্ত নোংরামি হিসাবে আমরা মনে করি। তাই আমরা দৈনিক যুগের চিন্তার এই ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো এই প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর দৈনিক যুগের চিন্তা তাদের এই নোংরা অপপ্রচার বন্ধ করবেন। অন্যথায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।

 

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গাবতলী বায়তুল মোকাদ্দাস জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুল আউয়াল বলেন, জীবন অত্যন্ত ভালো মানুষ, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকে সে। তার দ্বারা উপকার ছাড়া কারো অপকার হতে কখনো দেখিনি আমরা। এলাকাবাসীর প্রয়োজনে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখে জীবন। তার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার হচ্ছে, এগুলোর প্রশ্নই উঠে না, তা শত্রুতামূলকভাবে হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। গাবতলীতে আগে ব্যাপক অপকর্ম হতো, সাংবাদিক জীবন শক্ত হাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ায় এলাকায় এখন সর্বদা শান্তি বিরাজমান। মুলত, সাংবাদিক জীবন থাকাতে আমিও এলাকায় আসি, তা নাহলে আমিও আসতাম না। শুধু আমিই নয়, এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকেই সন্ত্রাসীদের কারণে এলাকায় আসতো না, তবে জীবন সোসাইটির দায়িত্ব নেয়ার পর এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখার কারণে এলাকা আজ শান্ত। গাবতলী এলাকায় খারাপ কিছু হয় এটা কেউ বলতে পারবেনা।

 

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বায়তুল মোকাদ্দাস জামে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে, যার জন্য জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। নি:সন্দেহে জীবন অত্যন্ত ভালো মানুষ, এখানে কোনো সন্দেহ নাই। তবে, এলাকায় যারা বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তারা হয়তো জীবনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে।

 

ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক জীবন অত্যন্ত ভালো মানুষ। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের সাথেই চলতে হয় সাংবাদিকের, এটা নিয়ে তো এতো বাড়াবাড়ি করার কিছু নাই। শামীম ওসমানের যুগের সাংবাদিকরা শামীম ওসমানের সাথে কথা বলছে, কথা বলতে বাধ্য হয়েছে। আবার এখন শামীম ওসমানরা নাই, বিএনপি হোক জামায়াত হোক, সেই যুগ এসে গেছে আবার তাদের সাথে কথা বলবে এটাই তো স্বাভাবিক।

 

গাবতলী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও গাবতলী বায়তুল মোকাদ্দাস জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনামুল ফেরদৌস মনা বলেন, আমরা যারা বিদেশ করে এসেছি, আমাদের মন হলো সাদা। আমরা যেটাকে ভালো তাকে ভালোই বলি এবং যেটা খারাপ সেটাকে খারাপ বলি। সেই হিসেবে জীবন স্পষ্টবাদী ছেলে এবং সবসময় ভালো কাজে জড়িত থাকে সে। এলাকার মধ্যে এতো সমস্যা হয়েছে তার সবই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে জীবনের কারণে। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জীবন সবসময় দৌড়াদৌড়ি করেছে, পরিশ্রম করেছে। মাদকে সয়লাব হয়ে গিয়েছিলো গোটা এলাকায়, সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র জীবনের কারণে। গোটা নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সর্বপ্রথম সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত হয়েছে আমাদের এলাকা। জীবন যা করেছে, খুবই ভালো কাজ করেছে, সে আমাদের এলাকার জন্য একটা আশির্বাদ বলে আমি মনে করি। আসলে, যে ভালো কাজ করে তার বিরুদ্ধেই দুষ্টরা লাগে। জীবনের এতো সব ভালো কাজে যাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে, মূলত তারাই জীবনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে, এছাড়া কিছু নয়।

 

গাবতলীর বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, রফিকুল ইসলাম জীবন যে একজন ভালো লোক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ এবং কারো অন্যায় সে সহ্য করতে পারেনা। অন্যায় দেখলেই সে প্রতিবাদ করে। কেউ বিপদে পড়লে তার পাশেই সে ঝাপিয়ে পড়ে বিনা স্বার্থে, দুইটা পয়সাও তাকে দেয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। এলাকার বহু মানুষের বিপদে তিনি উপকার করছেন যা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা।

 

তিনি আরও বলেন, একটি পত্রিকায় দেখলাম রফিকুল ইসলাম জীবনের নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে, সেই পত্রিকাটা দেখে আমি এক লাইন পড়েছি, তারপর পত্রিকাটা ছিড়ে ফেলে দিয়েছি। এতো মিথ্যা কথা সহ্য করা যায় না। সিসি ক্যামেরা লাগানোর কারণে সমগ্র এলকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে, এটা রফিক ভাইয়ের (রফিকুল ইসলাম জীবন) অবদান। আগে এলাকায় ছিনতাই সহ নানা অপকর্ম হতো, এখন এ সমস্ত কোনো কিছুই নেই, হাশিখুশী জীবন যাপন আমাদের। শুধু আমি নয়, এলাকার সবাই তাকে ভালো বলেই বলবে, বলতেই হবে, না বললে সে মোনাফেক।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ জ বন র ব র দ ধ ব দ ক জ বন আম দ র এল ক র এল ক য় ব যবস গ বতল মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • সব থেকে বড় আশ্রয়